Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

[:bn]আরোগ্য হাসি[:]

July 19, 2018
[:bn]বিনয়েন্দ্রকিশোর দাস সরকার বাড়িতে সবসময় মিনি উৎসবের হৈ হৈ রৈ রৈ। সরকারবাবুর তিন ছেলের প্রত্যেকের একটি করে ছেলে। বয়স দশ থেকে আঠারোর মধ্যে। তারা টো টো কোম্পানীর ম্যানেজার। হঠাৎ খো খো খেলা ছেড়ে, দু’বেলা টো টো করে ঘুরে বেড়ানো ছেড়ে তারা ঘরে বসে ফিসফিস করছে। মুখ তাদের গম্ভীর। ঠাকুমা বিছানা নিয়েছেন। ডাক্তার বাবুরা বলেছেন, শুধু ওষুধে এ রোগ সারার নয়। রোগটা মানসিক। মানসিক অবসাদ ও হতাশার সাগরে তিমি মগ্ন। রীতিমতো হাবুডুবু খাছেন। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের একই মত –‘দরকার তাঁকে হাসি-খুশি রাখা, তাঁর মনমেজাজ যেন প্রফুল্ল থাকে। টেনশান থেকে তাঁকে শত যোজন দূরে রাখতে হবে’। তিন নাতিতে গোলমিটিং করে। বন্ধুদের মধ্যে যারা কথা বলে, অঙ্গভঙ্গি করে হাসাতে ওস্তাদ তাদের লিস্ট করে। তাদের অনুরোধ করে যে করে হোক ঠাকুমাকে হাসাতেই হবে, হাসি-খুশি রাখতে হবে। বড় নাতি তমাল সক্কালবেলা কোথা থেকে ভানু বন্দোপাধ্যায়ের হাস্যকৌতুকের ক্যাসেট নিয়ে আসে। ঠাকুমার ঘরে চালিয়ে দেয়। সেরা হাসির কৌতুক ও মজায় ঠাকুমা প্রাণখুলে হাসেন। অনেকদিন পর তাঁর মেজাজটা বেশ সতেজ প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। আড়াল থেকে ছেলেরা দেখে বেশ খুশি। তারা বুঝে ফেলে এই মোক্ষম ওষুধ ভালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে। বিকেলে মেজ নাতি অমল ঠাকুমার কাছে যায়। বলে,‘ঠাকুমা, তোমাকে কিছু হাসি- মজার কথা বলব। শুনবে তো?’ ঠাকুমা বলেন, ‘শুনবো না কেন? বল।’ অমল বলতে শুরু করে, ‘একবার এক বৃদ্ধ ডাক্তার বাবুর কাছে গেছেন। বলেন, ‘ডাক্তারবাবু ডান পায়ের গোড়ালিতে খুব ব্যথা। আসলে পায়ের দোষ কি ? বয়স তো অনেক হয়েছে ।’ রসিক ডাক্তার বাবু ও মৃদু হেসে বলেন, ‘বাম পায়ের বয়স কি কম? তা তো নয়।’ বৃদ্ধ রোগী হাসেন...। ঠাকুমার মুখেও হাসির ঝিলিক দেখা যায়। পরদিন বেলা ন’টায় পাড়ার সেরা রগড়- করা ছেলে সমীর আসে ঠাকুমার কাছে। সে ঠাকুমার খুব প্রিয়। সমীর বলে, ‘হাসির কথা বলার প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছি। তোমাকে হাসাতে পারি কিনা দেখি। মন দিয়ে শোনো।’ ঠাকুমা বলেন, ‘বল।’ সমীর তার সাবলীল ভঙ্গিতে বলতে শুরু করল, ‘সত্তর বছরের শেখরদাদু হরেনকে বলে, নে চারটে দামি লজেন্স নে। তুই তো কলেজে পড়িস। আমি বলছি একটা চিঠি লিখে দে তো। আমার হাত কাঁপছে। লেখা জড়িয়ে যাচ্ছে।’ হরেন বলে, ‘পারব না। পায়েল বড় ফোঁড়া, খোঁড়াচ্ছি।’শেখরদাদু রেগে বলেন, ‘আজব ব্যাপার, পায়ে ফোঁড়া তো কি হল? তুই তো হাত দিয়ে লিখবি, আজকাল পা দিয়ে চিঠি লিখিস নাকি?’ হরেন বলে, ‘না দাদু, আমার হাতের লেখা এত ভারত বিখ্যাত যে তা গিনেস বুকে শীঘ্রই উঠতে যাচ্ছে। আমার লেখা কেউ পড়তে পারে না। আমাকে তো চিঠিটা পড়ে দেবার জন্যে যেতে হবে। পায়ে ফোঁড়া। ট্রেনে- বাসে যাব কী করে, বলো?’ ঠাকুমা নির্মল আনন্দে একটু মেতে ওঠেন। ঠাকুমার মেজ ছেলের কাজ চলে গেছে। প্রাইভেট কোম্পানি ব্যবসা গুটিয়েছে। দাদু পনেরো হাজার টাকা হারিয়েছেন। জমি নিয়ে একটা মোকদ্দমাতে তাঁদের হার হয়েছে। তাই ঠাকুমা অবসাদ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যে তাঁর শরীরের অবস্থা অনেক ভালো। তিনি হাসি- মজার জাদুতে বেশ খোশমেজাজ ফিরে পেয়েছেন। তাঁর মুখ থেকে নির্মল হাসির ঝর্না ঝরে পড়ছে। সতেজ, সজীব হচ্ছে তাঁর দেহ- মন। বাড়িতে ছেলে, পুত্রবধূদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা, যে গুমোট ভাব ছিল তা কেটে যাচ্ছে। ডাক্তারবাবুরাও বলেছেন, ‘আশা করছি উনি দ্রুত সেরে উঠবেন।’ পরদিন বিকেলে পাড়ার দারুণ আমুদে মেয়ে আরতি এসে বলে, ‘ঠাকুমা, তোমার সঙ্গে একটু মজা- হাসি- ঠাট্টা করব। সময় আছে তো?’ঠাকুমা বলেন, ‘বল কি বলবি। আমার মত শ্রোতা পাবি কোথায় রে?’ আরতি বলে চলো, ‘একবার রবি ঠাকুরের কাছে শান্তিনিকেতনে সাহিত্যিক বনফুলের (বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়) ভাই কানাই এলেন। তিনি মাঝে মাঝে দাদার চিঠি নিয়ে আসেন। কবির কাছে থাকা কয়েকজন বললেন, ‘গুরুদেব এখন কানে খুব কম শুনছেন, আপনি জোরে জোরে নামটা বলবেন।’কবি নাম জিগ্যেস করতেই তিনি সজোরে বলে ওঠেন, ‘আজ্ঞে আমি কানাই। বনফুলের ভাই।’ রবিঠাকুরও চটজলদি বলে ওঠেন, ‘আরে ব্বাবা,এ যে দেখছি রীতিমতো সানাই।’শুনে ঠাকুমার কী হাসি। পাড়ার ফণী মহারসিক। সেও ঠাকুমার কাছে বিকেলে হাজির। ঠাকুমাকে হাসাবে। কথায় কথায় সে বলে, ‘একবার একটা কুকুর একজন লোককে জোর কামড়াল। তখন কুকুরটা গলা ছেড়ে কাঁদল, মাটিতে গড়াগড়ি গেল। লোকটা হাসল। ফণী ঠাকুমাকে বড় জিগ্যেস করল, কেন বলতো?’ ঠাকুরমা বলেন, ‘কেন আবার? কুকুরটার দাঁত নড়ছিল।  লোকটাও ছিল আধখ্যাপা।’ ফণী বলে, ‘না। শোনো, লোকটার পায়ে ছিল প্লাস্টার। শক্ত প্লাস্টার। ফুলপ্যান্টে ঢাকা। যেই কুকুর জোর কামড়িয়েছে, প্লাস্টারে লেগে তার দাঁত নড়ে গেছে। ব্যস চরম যন্ত্রণায় কুকুর কাঁদছিল।  লোকটা মজা পেয়ে মৃদু হাসছিল।’ঠাকুমাও হাসলেন প্রাণখুলে। পরদিন বেলা দশটায় এল ফটিক। মহারসিক সে। সে বলে, ‘ঠাকুমা, একটু হাসি- ঠাট্টা করতে এলাম।’ বলেই বলল, ‘এক মামা বড্ড রেগে গেছেন ভাগ্নের ওপর। রেগে দুর্বাসা হয়ে তিনি বলে ওঠেন, তোকে এমন কষে এক চড় মারব যে সেই চড় খেয়েই দু-মিনিটে কলকাতা থেকে কাশ্মীর গিয়ে পড়বি।’ ভাগ্নে বলে, ‘লক্ষমী মামা আমার। আমি এক্ষুনি  কলেজ স্ট্রিট থেকে হাওড়া  যাব। জামাটা একটু ভালোভাবে ছুঁয়ে দাও না যাতে এক মিনিটে হাওড়া স্টেশন যেতে পারি।’ ঠাকুমার মুখে -চোখে হাসির ফোয়ারা। পরদিন বিকেলে ঠাকুমাকে অসীমের হাসানোর পালা। সেও কথায় কথায় বলে, ‘একবার দাদাঠাকুর (শরৎচন্দ্র পন্ডিত) নলিনীকান্ত সরকারকে তাঁর কলকাতার বাসায় বলেন, তোদের কলকাতাটা আজব। ক্যালেন্ডারে বছরে একবার ঝুলন একবার রাস। তোদের কলকাতায় দেখছি রোজ দু’বেলা রাস ও ঝুলন।’ নলিনীকান্ত বলেন, ‘কি যে আজেবাজে বলছ তুমি, তা হয় কি করে?’ দাদাঠাকুর গম্ভীর হয়ে বলেন, ‘রোজই অফিসে যাবার সময়ে ও অফিস থেকে ফেরার সময়ে বাসে, ট্রেনে মানুষের কি বিচিত্র ‘ঝুলন’ রে বাবা। মানুষের কি অন্তহীন ‘রাস’। বাপ্ রে বাপ। ঠাকুমা শুনে নির্মল হাসিতে ফেটে পড়েন। রাত্রে ডাক্তার আসেন। ডাক্তারবাবুর মুখে হাসি। সবাইকে ডেকে তিনি বলেন, ‘কোনো চিন্তা নেই। এবারের মতো উনি সেরে উঠছেন।  দিন সাতেকের মধ্যেই।’ সব নাতিরা ও পাড়াতুতো নাতি, ভাইপোরা সরকারবাবুর একটা ঘরে ঠাকুমাকে না জানিয়ে একটা লাফিং ক্লাব খুলল। তারা হঠাৎ ঠাকুমাকে রং করা ঘরে নিয়ে বলল, ‘তোমার বড় নাতি একটা ছোট দোকান খুলেছে, এস আশীর্বাদ করবে।’ ঠাকুমা রেগেই কাঁই। বলেন, ‘আমি জানলাম না, শুনলাম না এখন আশীর্বাদ করতে যাব? আমি এত ফেলনা? আমি কালই কাশী যাব।’ সব্বাই মিলে ঠাকুমাকে কাঁধে করে নিয়ে বড় চেয়ারে বসাল। পাড়ার যুবকরা সবাই ছিল। স্থানীয় বি . ডি . ও চেয়ার থেকে উঠে এসে  ঠাকুমাকে মাল্য ভূষিত করে বললেন, ‘এই লাফিং ক্লাবের সভানেত্রী পদে আমি মাননীয়া নির্মলা সরকারের নাম প্রস্তাব করছি।’ সব্বাই হৈ হৈ  করে ‘থ্রি চিয়ার্স ফর ঠাকুমা’ বলে তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করলেন। ঠাকুমার মুখে নির্মল হাসি।[:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp