রূপের কি হচ্ছে হাল, চামড়া যেন গাছের ছাল : ছেলেরা অত মাথা ঘামায় না, কিন্তু শীতের রুক্ষ হাওয়া বইতে শুরু করল কি মেয়েদের ভ্রু কুঁচকে উঠল, কি হাল হচ্ছে গায়ের চামড়ার ! গরমে শরীরের অনেকটা অংশই অনাবৃত থাকে। শীতে শরীর তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই থাকে ঢাকা, অথচ দেখা যায় ত্বকের টান টান সতেজ ভাবটাই কেমন হারিয়ে যাচ্ছে, খসখসে হয়ে যাচ্ছে চামড়া, সাদা খড়ির দাগ উঠছে এখানে-ওখানে। নিজের হাত পায়ের অবস্থা দেখে নিজেরই লজ্জা করছে এখন। সেই সঙ্গে মাথায় দেখা দিচ্ছে খুশকি। নিয়মিত শ্যাম্পু করা সত্বেও চুলের সে জেল্লাই যেন নেই। উস্কো খুস্কো চুলগুলোকে ঠিকঠাক সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটাই যেন একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি করবেন ওই চুল নিয়ে ! আরও বড় সমস্যা গায়ের ওই রুক্ষ ত্বক নিয়ে ! লোকসমাজে বার তো হতে হবে, ঘরের কোণে লুকিয়ে বসে থাকলে তো আর চলবে না ! সবচেয়ে আগে যে কথাটা বলবার সেটা হল, বাইরে থেকে ক্রিম,লোশন, ময়েশ্চরাইজার যতই ঘষুন,আসল চিকিৎসাটা কিন্তু হবে ভেতর থেকে। শরীরটাকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে না পারলে, বাইরে থেকে হাজার মলম ঘষুন তেমন কিছু লাভ হবে না। ভেতর থেকে ঠাণ্ডা রাখবেন কি করে। আদ্দিকালের উপদেশটাই আর একবার শুনিয়ে দিচ্ছি, জল খেতে হবে প্রচুর--- কোল্ড ড্রিংকস নয়, ডাবের জল নয়, একেবারে বিশুদ্ধ জল। যত পারেন তত খান। ডাক্তাররা বলছেন, কমসে কম আট লিটার জল খান দিনে। (চমকে উঠবেন না শুনে), শীতের দিনে তেষ্টা পাবে না, তবু খেতে হবে। নইলে কিন্তু রুক্ষ ত্বকের ঝামেলা থেকে বাঁচতে পারবেন না। শীতের সময় প্রচুর জল খেলে ত্বক তো ভালো থাকবেই, অসুখ-বিসুখ এমনকি সর্দি-কাশির হাত থেকেও বাঁচতে পারবেন। শুধু ত্বকের কথা যদি বলেন, বাইরে থেকেও তাকে একটু যত্ন আত্তি করতে হবে। খাবার-দাবারের কথা আগেই বলেছি, আর একবার স্মরন করিয়ে দিচ্ছি, টাটকা মাছ, আর সতেজ সবুজ শাকসবজি ত্বকের পক্ষেও কিন্তু খুব ভালো। এর সঙ্গে ব্রকলি, গাজর-টাজরও খাওয়া চলতে পারে। ঝকঝকে ত্বকের পক্ষে আর একটা জিনিস খুব ভালো, চকলেট-- কিন্তু পরিমাণটা একটু ঠিক রাখতে হবে।
শরীর কেমন আই-ঢাই, দুপুর হলেই উঠছে হাই :
এটাও কিন্তু শীতের একটা প্রধান লক্ষণ। কাজকর্মের জন্য যাদের বাইরে থাকতে হয় তাদের একটু অল্প হলেও যেসব মহিলা ঘর-সংসার সামলান, দুপুরে একটু রোদ্দূরে গিয়ে বসার পরই গা এলিয়ে আসে। বয়স্ক ও অবসরপ্রাপ্ত পুরুষদের তো কথাই নেই, দুপুরে ছোট্ট একটা ভাত ঘুম না হলে শরীরটা কেমন ম্যাজম্যাজ করে। তাদের নিয়ে ততটা অসুবিধে নেই, কারণ শীতে দিবানিদ্রা মোটেই ভালো নয় সে কথা তারা জানেন। কিন্তু অফিস- টফিসে কাজে যান যারা, তাদেরও কি শরীর ম্যাজম্যাজ করে দুপুরের পর থেকে ! করে, এটা সম্পূর্ণ মানসিক ব্যাপার তা নয়, শারীরিক কারনও আছে এর। এই ব্যাপারটা নিয়ে বিভিন্ন শরীরবিজ্ঞানী গবেষণা করেছেন। একজনের কথা বলি, ডক্টর ওয়ার্টম্যান, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও গবেষক। 'দা সেরোটনিন পাওয়ার ডায়েট' নামে একটি গ্রন্থের সহযোগী লেখক তিনি। তাঁর অভিমত হল, শীতকালে যে দিনগুলো ছোট হয়ে আসে এবং রাত অনেক বড় হয় তার একটা প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে শরীর ও মনের ওপর। আমাদের কাজে উৎসাহের মাত্রা এর ফলে কিছুটা কমে আসতে বাধ্য। আমাদের মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামে যে রাসায়নিক পদার্থটি আছে তার কাজ হলো আমাদের মন মেজাজ ভালো রাখা এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করা। শীতের সময় এই যে দীর্ঘ সময় জুড়ে থাকে অন্ধকার এবং অল্প সময় থাকে আলোকিত দিবাভাগ, সেরোটোনিনের ওপর এতে প্রভাব পড়ে।' কথাগুলো সত্যি ভেবে দেখার মত। একটা ব্যাপার খুব সাধারণভাবেই আমরা লক্ষ্য করে থাকি, শীতের সকালে আমরা সকলেই বেশ চনমনে থাকি, মন-মেজাজ অত্যন্ত ভালো থাকে, কিন্তু বেলা যত শেষ হয়ে আসে, রোদের তেজ কমতে থাকে, আমাদের উৎসাহ তত যেন ঘাটতি পড়ে। মন মেজাজের এই যে ওঠাপড়া এটা একটা সাধারন সত্য এবং ডক্টর ওয়ার্টম্যান মনে করেন, এর জন্য দায়ী হচ্ছে মস্তিষ্কের সেরোটোনিন। কী করে রেহাই পাওয়া যাবে এই স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া থেকে ! মেজাজ শরীফ করবার জন্য কি দরকার হবে ! সেরোটোনিনকে চাঙ্গা করতে কি ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে? ডক্টর ওয়ার্টম্যানের মতে, খাদ্য-তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন সংযোজন করলেই সেরোটোনিন তার উপযুক্ত রসদ পেয়ে যাবে। প্রাতরাশে বেশি করে প্রোটিনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডিম তো থাকবেই, লো-ফ্যাট চিজও থাকতে পারে। মধ্যাহ্নভোজেও প্রোটিন সরবরাহ ভালো রাখতে হবে। রাতের খাবারটা অবশ্যই তাড়াতাড়ি খেতে হবে কিন্তু প্রোটিনের ব্যাপারটা সেখানেও ভুলে গেলে চলবে না। যাঁদের সুযোগ আছে তাঁরা যদি আটার রুটি খান, ব্রাউন ব্রেডখান , ঢেঁকিছাটা চাল খান, ফল খুব ভালো পাবেন। প্রোটিন মানেই কিন্তু বেশি ঝাল মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার নয়, দুষ্পাচ্য রান্না খেলে শরীরকে কিছুটা সাহায্য করা হবে না।
কেবল খাওয়ার কথাই বলা হল, ক্যালোরি পোড়াবার ব্যবস্থাও কিন্তু করতে হবে। হালকা ব্যায়াম সবসময়ই খুব ভালো। কিছু না পারলে হাঁটুন। অনেকক্ষন হাঁটার দরকার নেই, জোরে হেঁটে ঘাম ঝরাবার দরকার নেই, দিনের মধ্যে কয়েকবার কুড়ি পঁচিশ মিনিট হেঁটে আসুন। কাজ করতে করতে ঘাড়-টাড় ধরে গেছে --উঠে পড়ুন,দশ মিনিট অফিসেরই এদিক-ওদিক ঘুরুন, দেখবেন চাঙ্গা হয়ে গেছেন। আসলে হাঁটলে অ্যারোবিক এক্সারসাইজ হয়, অ্যারোবিক এক্সারসাইজ করলে হার্ট চাঙ্গা থাকে, হার্ট চাঙ্গা থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে শুধু প্রোটিনের কথা বলা হয়েছে বলে শাকসবজির কথা ভুলে গেলে চলবে না। ডাক্তাররাও বলছেন শীতকালে চকোলেট একটা সুপথ্য--- বাচ্চা মেয়েদের পক্ষে এবং বয়স্কা বাচ্চাদের পক্ষেও এটা সুখবর। না, শীতের সমস্যা খুব তীব্র হয় না, আমি সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের কথাই বলছি। খাওয়া ভালো হয়, শরীর ভালো থাকে, রাতে ঘুমও ভালো হয়--- একটু শরীরটাকে সচল রাখুন, চট করে সর্দি-কাশি বাধিয়ে বসবেন না, যাদের ফ্যারেনজাইটিস নিয়ে সমস্যা আছে গলায় একটা কমফোর্টার ব্যবহার করুন, মহিলারা ত্বকের যত্ন নিন। শীত আর ক'দিন বলুন, দেখতে দেখতে ফুরিয়ে যাবে, ফাগুনের হাওয়ায় শরীর জুড়ালেও শীত চলে গেল বলে মন কিন্তু খারাপ হতে পারে।
বাক্যবাগীশ
[:]Copyright © 2024 Dev Sahitya Kutir Pvt. Ltd. All rights Reserved
Design & Developed By SR SOLUTIONS