[:bn]আফ্রিকার এক গরিব দেশের নাম নাইজেরিয়া। সত্যিই কি গরিব দেশ? আজ হতে পারে গরিব । এক কালে ছিল না। ব্রিটিশ শাসকেরা আফ্রিকার বহু দেশের ধন-সম্পদ লুট করে নিজেদের কোষাগার ভর্তি করেছে। কে ভুলতে পারে রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত 'আফ্রিকা' কবিতার কথা।
সত্যি বলতে কি আজকাল নাইজেরিয়া তেমন গরিব দেশ নয়। যতগুলি দেশ আছে আফ্রিকায় , নাইজেরিয়া অনেকটাই এগিয়ে আছে। ২০১৪ সালে নাইজেরিয়ার আয়ের পরিমাণ দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আফ্রিকার দেশগুলির ভেতর নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বেশি মানুষ থাকেন । তবে সত্যি কথা এই, তেল বেচে সে দেশের অল্প কয়েকজন মানুষ টাকার কুমির হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষের জীবন অভাব-অনটনেই কাটছে ।
দেশের বেশীরভাগ মানুষ গরিব হলে খাবারই জোটে না, লেখাপড়ার কথা ভাববে কেমন করে ?মেয়ে হলে তো কথাই নেই। চলার পথে হাজার বাধা।সেই বাধা পার করে নাইজেরিয়ার গরিব মুসলমান পরিবারে এক মেয়ে বিজ্ঞানের লেখাপড়া ও গবেষণায় পৃথিবীর নজর কেড়েছেন । তার নাম রাবিয়া।পুরো নাম রাবিয়া সালিহু সঈদ।
উত্তর নাইজেরিয়ার ওয়াঙ্গারা নামের এক ছোট্ট শহরে ১৯৬৩ সালে একুশে এপ্রিল রাবিয়ার জন্ম । এখানে মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে সকলেরই অনীহা ।খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় তারপর তারা ঘর-সংসার করে। স্কুলে যদিও বা কেউ কেউ পড়ে,তার উপরে যাওয়ার কথা বেশিরভাগ মেয়েই ভাবতে পারে না। বেশিরভাগ জায়গায় না হলেও নাইজেরিয়ার কোনো কোনো জায়গায় ছেলেরা একের বেশি বিয়ে করে সবাইকে নিয়ে ঘর সংসার করে। বহুবিবাহ চলে সেখানে।
রাবিয়ার বাবা দুজনকে বিয়ে করেছিলেন। দুই মা ।দশ ভাইবোন ।তিন ভাইবোন ছোটবেলাতেই মারা যায়। বাবা নাইজেরিয়ার মিলিটারীতে চাকরী করতেন। তিনি চাইতেন তার সকল ছেলে মেয়ে লেখাপড়া শিখুক । মেয়েদের আলাদা রকম দেখতে চাইতেন না বাবা।তবু সামাজিক অনুশাসনের ভয়াবহ চাপের কাছে হার মেনেছেন। চেয়েছিলেন বাবা রাবিয়া ডাক্তারি নিয়ে পড়াশুনা করুক । তা আর হল না । মিলিটারি স্কুলে পড়তেন রাবিয়া । ক্লাসে সকলের উপরে নাম্বার পেয়ে পাশ করেছিলেন। তবু পড়া বন্ধ হয়ে গেল।আঠারো বছর হয়েছে কি হয়নি তার বিয়ে হয়ে গেল। প্রথম সন্তানের জন্ম হল যখন ,রাবিয়া দেখলেন ,এই সন্তান কখনো ঠিকমত হাঁটাচলা করতে পারবে না ।দু 'পায়ের সবকটি আঙুল বাঁকানো । মা জানেন এমন সন্তানকে তাঁর বেশি সময় দিতে হবে । নিজের পড়াশোনার সকল ইচ্ছে বিসর্জন দিলেন । তারপর আরও দুই সন্তানের মা হলেন রাবিয়াতিন সন্তানকে সামলানো সহজ কথা নয়। বয়স তার উনতিরিশ বছর হয়েছে। এগারো বছর একটানা লেখাপড়ার জগতের সঙ্গেতাঁর কোনো যোগাযোগ নেই । জেদ চাপল রাবিয়ার তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করবেন।বাবা চেয়েছিলেন ,তাঁর এই মেয়ে ডাক্তার হোক । রাবিয়া বাবার সাধ পূরণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রসায়নে খানিকটা নম্বর কম পেয়েছিলেন বলে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেলেন না।
ঊনত্রিশ বছর বয়সে বিজ্ঞান পড়তে চলেছে ৩ সন্তানের মা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোন পয়সা নেই। বিয়ের সময় পণ হিসেবে একটা সোনার হার পেয়েছিলেন। সেই হারটি তিনি বেচে দিলেন। বাড়িতে একটা নার্সারি স্কুল শুরু করলেন। সে থেকে যে আয় হবে, তাঁর পড়ার খরচ চলে যাবে । রাবিয়া বলেছেন অনেক মেয়েরই আমার মত পড়াশুনার ইচ্ছা থাকে । টাকাকড়ির অভাবে সে ইচ্ছে পূরণ করতে পারে না ।
১৯৭৭ সালে নাইজেরিয়ায় বায়েরো বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়। সেখানে রাবিয়া পদার্থবিদ্যার স্নাতক ক্লাসে ভর্তি হন। নাইজেরিয়া
যে বিদেশীরা শাসন করছে তারা শোষণ করতে এসেছিল, সেখানকার মানুষের লেখাপড়ার কথা ভাবেনি। এদের হাতে তাই সে দেশে একটিও বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি হয়নি । ১৯১৪ সালে স্বাধীন হয়েছে নাইজেরিয়া। আর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি হয়েছে ১৯৪৮ সালে। বায়েরো বিশ্ববিদ্যালয় আগে কলেজ ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এমএসসি ও পরে ডক্টরেট ডিগ্রি করেছেন রাবিয়া। বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের রেখে ক্লাসে গিয়েছেন । মোট ছয় ছেলে-মেয়ের মা হয়েছেন রাবিয়া। প্রথম সন্তানের অসুবিধার কথা আমারা আগে বলেছি।আর একটি সন্তানও দুরারোগ্য রক্তাল্পতা রোগে ভুগছিল । কেমন করে যে তিনি সামলেছেন সবকিছু, আমরা ভাবতেও পারছি না।