[:bn]বই পড়তে কে না ভালবাসে। লাইব্রেতেও যাই বই আনতে বা সেখানে বসে পড়ার জন্য। আমাদের দেশেও অনেক শহরে আপনারা ভ্রম্মমান লাইব্রেরি দেখে থাকবেন। এমনকি কিছুদিন আগে খবরের কাগজেও আপনারা দেখে থাকবেন যে পুরো একটি ট্রেনকে লাইব্রেরি বানানো হয়েছে এবং সেটি বিভিন্ন স্টেশনে যাচ্ছে পাঠকদের কাছে। আজ এই বিশ্বের কিছু বিচিত্র লাইব্রেরি সম্পর্কে জানাতে চাই।
ওয়েপন অব মাস ইনস্টাকশন, আর্জেন্টিনাঃ ১৯৭৯ সালে একটি ফোর্ড ক্যালকনকে পরিবর্তিত করা হয়েছিল বুক ট্যাংকে। একসময়ের যুদ্ধে এটি ব্যবহার করা হয়েছিল। তোমরা শুনলে আরো খুশি হবে যে বহু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এই লাইব্রেরীতে বই দান করেছেন। এটি তৈরি করা হয়েছে যাতে পথচারীরা যেতে আসতে এখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারেন । আমাদের এখানেও এরকমএরকম থাকলে বইপ্রেমিদের খুব মজা হত, তাই না?
বুকইয়ার্ড : এই লাইব্রেরিটি আছে বেলজিয়ামে। বেলজিয়ামের ঘেন্টে সেন্ট পিটার্স এবি ভিনিয়ার্ডে ইতালিয়ান শিল্পী মাসিমো বার্তোলিনি এই লাইব্রেরীটি তৈরি করেছেন।২০১২ সালে বেলজিয়ামের আর্ট ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষে এই লাইব্রেরীটি বানানো হয়েছিল। যাতে পাঠকেরা মনোরম পরিবেশে ইচ্ছেমতো বই পড়তে পারেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এখানে বেশিক্ষণ বসে বই পড়লেও কেউ আপনাকে বলবে না উঠে যেতে।
ওপেন এয়ার লাইব্রেরি : এই লাইব্রেরীটি আছে জার্মানির ম্যাজবার্গে।২০০৫ সালে এই লাইব্রেরীটি বানানো শুরু হয় এবং ২০০৯-এ শেষ হয়েছে। এখানেও ঘন্টার পর ঘন্টা ইচ্ছেমতো মনোরম পরিবেশে বসে পছন্দমতো বই পড়তে কোনও বাধা নেই।
লিটল ফ্রি লাইব্রেরি : এখনো পর্যন্ত বিশ্বের কুড়িটি দেশে এবং আমেরিকায় চল্লিশটি রাজ্যে এই লাইব্রেরী দেখতে পাওয়া যায়। এই লাইব্রেরীটি প্রথম বানিয়েছিলেন হার্ডসনের টোড বোল তাঁর মায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। টোডের মা ছিলেন একজন শিক্ষিকা এবং বই পড়তে খুব ভালোবাসতেন। সবসময় বই ছিল তাঁর সঙ্গী। শুধু তাই নয় অন্যকেও বই পড়াতে ভালবাসতেন। তাই তাঁর মৃত্যুর পর টোড একটি ওয়াটার-প্রুফ বক্স বানিয়ে, তারমধ্যে বেশ কয়েকটি বই ভরে রেখে দেন বাড়ির বাইরে। সেই থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই লিটল ফ্রি লাইব্রেরির কনসেপ্ট।
লেডিনস্কি গার্ডেন লাইব্রেরি : ইসরাইলের তেল আবিবে কি লেডিনস্কি গার্ডেনে লাইব্রেরীটি আছে। লেডিনস্কি উদ্যানে তৈরি এই লাইব্রেরীটি যৌথভাবে বানিয়েছেন অর্টিম এবং ইয়োভ মেইরি নামে দুজন আর্কিটেক্ট। সবথেকে মজার ব্যাপার হলো এই লাইব্রেরীতে কোন দেওয়াল বা দরজা নেই। এবং বইয়ের তাকগুলোতেও লাগানো আছে উজ্জ্বল আলো যাতে রাতেও বই খুঁজতে কোন অসুবিধে না হয়। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, এই লাইব্রেরীতে ১৪ টি ভাষায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টি বই আছে।
পার্ক লাইব্রেরি : কলম্বিয়ার বেগোতায় সর্বশিক্ষা অভিযানের একটি অঙ্গ হিসেবে তৈরি হয়েছিল এই লাইব্রেরীটি। প্রতিটি স্ট্যান্ডে স্বেচ্ছাসেবক থাকেন যিনি সপ্তাহে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন সেখানে।
ফোন বক্স লাইব্রেরি : বৃটেনের এই লাইব্রেরীটি আরও অভিনব। ২০০০৯ সালে এটি চালু হয়েছিল। বাতিল হয়ে যাওয়া ফোনের বুথগুলো ব্যবহার করেই তৈরি করা হয়েছে এই লাইব্রেরি। কি অদ্ভুত না !
দ্যা উনি : নিউ ইয়র্ক সিটি এবং আলমাতিতে গেলে আপনারা দেখতে পাবেন এই অদ্ভুত লাইব্রেরিটি। শহরের যে কোনো ফাঁকা জায়গাকে মুহূর্তের মধ্যে অস্থায়ী পাঠাগারে পরিবর্তিত করা হয়। সহজেই যাতে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নিয়ে যাওয়া যায় এই চলমান পাঠাগারকে এবং এসব চিন্তা করেই এই লাইব্রেরীটি তৈরি করা হয়েছে। এটা বানিয়েছিলেন বোস্টনের স্যাম এবং লেজলি দাভোল।
ইকিয়া বুন্দি বিচ আউটডোর বুকসেস : যদিও মাত্র একদিনের জন্য এই লাইব্রেরীটি তৈরি করা হয়েছিল তবুও আমরা বলতে পারি এটি ছিল এক অভিনব প্রচেষ্টা। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত বুন্দি বিচ-এ এই অস্থায়ী লাইব্রেরীটি তৈরি করা হয়েছিল। এই লাইব্রেরির ৩০ টি বুককেস-এ ছিল এক হাজারের ওপর বই। পাঠকেরা যে কেউ র্যাক থেকে ইচ্ছেমতো বই তুলে নিতে পারতেন। কিন্তু শর্ত ছিল একটাই, তার পরিবর্তে নিজেদের সংগ্রহ থেকে রেখে যেতে হবে একটি বই অথবা একটি স্বর্ণমুদ্রাও দান করা যেতে পারে। সেসব দান গিয়েছিল দ্যা অস্ট্রেলিয়ান লিটারেসি এন্ড নিউমেরিসি ফাউন্ডেশনে।
পাবলিক বুকশেলফ : জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে এই লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরি কিভাবে তৈরি হয়েছিল জানেন কি ? বিভিন্ন সংস্থা এবং ব্যক্তিগত অনুদানে তৈরি হয়েছে এই বিনামুল্যের লাইব্রেরীটি। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা এই লাইব্রেরীটি দেখাশোনা করেন।একেকটি বুকসেলফে প্রায় ২০০ টি করে বই থাকে। সব বই আপনারা যদি উল্টেপাল্টে দেখতে চান তাহলেও সময় লেগে যাবে প্রায় ছয় সপ্তাহ।
এবার বিচিত্রসব লাইব্রেরি সম্পর্কে আপনারা কিছুটা জেনে গেলেন তো ? এবার এগুলো শুনিয়ে বন্ধুদেরও অবাক করে দিতে পারবেন। কলকাতা বইমেলায় গিয়ে বই কিনতে ভুলবেন না। জানবেন বই পড়লে জ্ঞান আরো বাড়বে, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে জ্ঞানই হল এমন এক জিনিস যা দান করলে আরো বাড়ে। তাই যত পারেন বই পড়ুন। একথাটি আমি কার থেকে শুনেছি জানেন ? নামি সাহিত্যিক স্বয়ং মহাশ্বেতা দেবী আমাকে বলেছিলেন। তাই বই পড়ার অভ্যেস বাড়ান। দেখবেন ভবিষ্যতে অনেক লাভবান হবেন।
বইয়ের গ্রাম ----উরুয়েনা : কলকাতা বইমেলা নিয়ে চারিদিকে খুব হইচই শুরু হয়ে গেছে। আপনারাও সকলে নিশ্চয়ই খুব উৎসাহিত আমার মতোই। আমাদের এই পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি শহর আছে যেগুলোকে বলা যেতে পারে বইয়ের শহর। যেখানে সবসময়ই বইয়ের কেনাবেচা চলছে। এমনকি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর বুক টাউনস বলে সেসব শহরের একটি সংগঠন আছে। আমি যদি বলি বই নিয়ে আস্ত একটা গ্রাম আছে। তবে আপনাদের অনেকের কাছেই বেশ অদ্ভুত বলে মনে হবে। না, এটি একটি আকাশ কুসুম কল্পনা নয়। বই নিয়ে যখন কথা হচ্ছে, তখন আপনাদের একটি বেশ মজাদার গ্রামের কথা বলতে চাই।গ্রামটির নাম উরুয়েনা এবং এটি স্পেন দেশে অবস্থিত। একটি দেওয়ালের পেছনে মধ্যযুগীয় একটি গ্রাম কিংবা একটি ছোট্ট শহর হল উরুয়েনা। এই স্থানটির শেষে একটি প্রাসাদ আছে আর চারদিকে শুধু মাঠ বা প্রান্তর আছে ,যার মাঝখান দিয়ে আছে রাস্তা। এই গ্রামটিকে বইয়ের গ্রাম বা লাইব্রেরিও বলা যেতে পারে ।
এই গ্রামে এই গ্রামে প্রায় দুশো লোক বসবাস করেন। সেখানে ১২ টি বইয়ের দোকান আছে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি প্রতি ১৬ জনের জন্য একটি বইয়ের দোকান। এই গ্রামে যে সব বইয়ের দোকান আছে সেগুলো অন্যান্য জায়গার বইয়ের দোকানের মতোই, তবে সেখানে পাওয়া যায় পুরাতন এবং এমন কিছু বই যা দুষ্প্রাপ্য। আবার দুয়েকটি দোকান আছে যেগুলোতে শিশুদের বই পাওয়া যায়। এখানকার লোকেরা ২০০৭ সালে ঠিক করেছিলেন যে তাঁরা এই গ্রামটিকে বইয়ের শহর হিসেবে গড়ে তুলবেন।
উরুয়েনায় আছে প্রাচীন ক্যালিওগ্রাফি শেখার প্রতিষ্ঠান ! যে প্রতিষ্ঠানের ক্লাসে পাওয়া যায় আগেকার দিনের শেখার কৌশলও। উরুয়েনার আরেকটি গৌরবের বিষয় হলো তাঁদের আছে পাঁচটি জাদুঘর। অবাক করা ব্যাপার হল এগুলোও সাধারণত বই লেখা ও এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে এই অল্প কয়েক জন মানুষ আছে এখানে তাহলে বইয়ের দোকানগুলো কি শুধু নামেই ? না , শুধু নামেই না। বর্তমানে উরুয়েনা প্রতিবছর অন্তত ৪০ হাজার বই প্রেমিককে আকৃষ্ট করে,যাঁরা এই পথে যাতায়াত করেন। তাঁরা শুধু বই-ই কেনেন তা কিন্তু নয়,কখনও কখনও তাঁরা লেকচার শোনেন ও ক্যালিওগ্রাফি ক্লাসেও অংশ নেন। আমাদের শহরেও এরকম একটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত হলে খুব ভালো হয় তাই না ? আপনাদের সঙ্গে হয়তো দেখা হয়ে যাবে কলকাতা বইমেলার কোনো বইয়ের দোকানে।