[:bn]শুভ নববর্ষ। নতুন বছরে অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা রইল আপনাদের জন্য। বাঙালির চোদ্দতম পার্বণ দোরপ্রান্তে আগত। মানুস-সাহিত্য-সংস্কৃতির এক মহামিলন। এ যেন পাথক-প্রকাস্ক-লেখক-বই বিদ্যোৎসাহী জিজ্ঞাসু মিলে এক মহাউৎসব। আপনারা বই মেলায় এসে বই কেনার বিশেষ তাগিদ অনুভব করেন জানি, তাই আমরা প্রকাশকরা বই ডিসপ্লে করে রাখি,যাতে আপনারা বই হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে পারেন। আমরা সরাসরি আপনাদের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের অবকাশ পাই। আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী পরবর্তীকালে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারি।
বইমেলার কি বিচিত্র পরিবেশ! কোথাও উইনিফর্ম-পরা স্কুলের ছেলেমেয়েরা লাইন করে এগোচ্ছে,কোথাও কোনো প্রবীণ তাঁর অনেকদিন আগেকের প্রীতিভাজনকে খুঁজে পেয়ে আড্ডা জমিয়েছেন,কোথাও বইয়ের প্যাকেট হাতে নিয়ে দ্রুত হেঁটে চলা শিশু, আবার কোথাও কাঁধে-ঝোলান ব্যাগ নিয়ে মন্থরগতি জ্ঞানান্বেষী। চা, কফি বা শীতল-পানীয় খেতে খেতে কারোর বিশ্রাম-সুখ উপভোগ, কোথাও হারানো সঙ্গীকে খুঁজে পাবার অন্বেষণ, কখনো এস. বি. আই. অডিটোরিয়ামে প্রখ্যাত লেখক-পাঠক সমাবেশে গঠনমূলক আলোচনা। আর স্টলের ভিতরে? সে আর এক দৃশ্য! নানা শ্রেণির মানুষ, কেউ প্রাণপণ চেষ্টায় ঠেলাঠেলি করে কউন্টার-এর দিকে এগতে ব্যাস্ত, এর কেউ ভিড় এড়াবেন বলে স্টল-এর এককোনায় দাঁড়িয়ে সন্ধানী আলোর মতো নিজের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছেন সাজিয়ে রাখা বইগুলোর দিকে, কেউ দেখছেন অনেক—কিনছেন সামান্যই, কেউ আবার ঝোঁকের মাথায় অনেক বই কিনে ফেলেছেন। আসুন প্রত্যাহিক জীবনের মালিন্যের অনেক উর্ধে উঠে বইমেলার উন্মাদনাটুকু প্রানভরে অনুভব করি।
ছেলাবেলায় যখন মায়ের হাত ধরে বইমেলায় যেতাম তখন খুব সমস্যায় পরতাম, মনে হত বাগিচা ভরা নানা জাতের ফুল, এর মধ্যে থেকে ভেবেচিন্তে ঠিক করে নিতে হবে কোনটা কোনটা নেব! কী সাংঘাতিক কঠিন কাজ! মনে আছে সেবার স্কুলে বাংলায় পাঠ্য বই ছিল ‘সহজ পাঠ’। সবে নতুন ক্লাসে উঠেছি কিন্তু ‘সহজ পাঠ’-এর কবিতাগুলো মা প্রথমেই পড়িয়ে দিয়েছিলেন। অন্ধ কুঞ্জবিহারির ভাবনা তখন আমায় পেয়ে বসেছিল। আহা!মানুষটি কী দুঃখী! পোড়ো মন্দিরে একাএকা থাকে। কেউ যায় না কেন? ঠিকানা তো দেওয়াই আছে—অঞ্জনা নদীতীরে চন্দনা গাঁয়ে। মা বলেছিলেন, বইমেলায় গিয়ে রবিদ্রনাথের আরও বই কিনে দেবেন। তা মেলায় গিয়ে কিনলাম ‘শিশু’ ও ‘জীবনস্মৃতি’, সেই থেকে বইয়ের সঙ্গে আত্মীয়তা শুরু। আজ যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈবাহিক সুত্রে যুক্ত হয়েছি, সেই ‘দেব সাহিত্য কুতির’-এর স্টলেও বহুবার দীর্ঘ লাইন দিয়ে বই কিনেছি। ‘বিবাহ’-র প্রসঙ্গে বলি, মাঘ মাসে প্রতিবার নবকল্লোল-এর প্রচ্ছদ কাহিনী হয় ‘বিবাহ’-কে কেন্দ্র করে। মাঘ মাস তো বিয়েরই মাস, আসলে গরম প্রধান দেশের শীতবিলাসী বাঙালি আমরা, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিটাই বিবাহের আদর্শ সময় বলে মনে করি। শিল্পী রঞ্জন দত্ত ভারি চমৎকার প্রচ্ছদ করেছেন এবার- বইমেলার সঙ্গে ‘বিবাহ’ কে যুক্ত করে!
আপনাদের জ্ঞাতা্র্থে জানাই, আগামি ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দেব সাহিত্য কুটির-এর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান বইমেলা প্রাঙ্গণে এস বি আই অডিটোরিয়ামে। বই-এর খবর পত্রিকার ভেতিরেই দেওয়া আছে। অবশ্যই আসবেন। মনে আশা রইল বইমেলায় দেখা হবে—ভালো থাকবেন।