[:bn]আমাদের স্কুলের সামান্য মাইনের মালি করালীর নাম আজ এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষ জানেন। ছোটরা তো বটেই বড়রা পর্যন্ত করালীর কথা সকলকে বলে বেড়ান। তা করালীদাদা কাজের মতো কাজ করে গেছেন। অবশ্য শুধু করালী বললে কেউ চিনবে না। বলতে হবে গাছ-করালী। ঐ নামে এই অঞ্চলের সকলেই ওঁকে চেনেন। গাছ- করালীর পুরো নাম ছিল করালী বাগদি। তাঁর নেশা ছিল গাছ লাগানো। আমাদের গ্রামের শেষে বয়ে চলেছে একটি খাল। বর্ষার সময় খালের দু’ধারে উপচে ওঠে জল। জমিটাও খুব উর্বর। বর্ষা এলেই করালী খালের দুধারে আম- জাম, বট-অশ্বত্থের চারা লাগাত। শুধু লাগাতই না,গরু- ছাগলের হাত থেকে গাছগুলোকে সে রক্ষা করত। গাছগুলোও ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠত। প্রচন্ড গরমের সময় সে দরকার হলেই গাছে জল দিত।
একদিন দেখলাম,আমাদের ফুটবল মাঠের সীমানার খানিকটা বাইরে করালীদা একটা বটগাছ লাগাচ্ছেন। জিগ্যেস করতেই বললেন, গাছ আমাদের উপকারী বন্ধু। গাছ আমাদের ফুল দেয়, ফল দেয়, ছায়া দেয়, বাতাস দেয়। করালী বাগদি আজ আর নেই। কিন্তু তাঁর সযত্নে লাগানো আম- জাম- বট গাছগুলি আছে। গাছগুলোকে দেখলে সকলের মনে পড়ে যায় গাছ-করালীর কথা। মনে পড়ে তাঁর কথা- গাছ আমাদের উপকারী বন্ধু। গাছ যে কার্বন- ডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে আমাদের অক্সিজেন দেয় এ কথাটা হয়ত করালীদা জানতেন না। কিন্তু যা জানতেন তাই বা আমরা ক’জন মনে রাখি। করালীদা যে কথাটা সেদিন বুঝেছিলেন আমরা আজ তা মর্মে -মর্মে উপলব্ধি করছি। সত্যিই আজ বলতে ইচ্ছে করে- গাছ-করালী অমর রহো।
দেবিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়(গ্রাম-দিগপাড়, পোঃ- দিগপাড়, বাঁকুড়া-৭২২ ১২২)[:]