Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

[:bn]ফেলুর কেরামতি[:]

September 23, 2018
[:bn]এই ফেলু কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত ফেলু গোয়েন্দা নয়। এই ফেলু একেবারে এক খাঁটি ‘ক্যালকেসিয়ান রোডস্টার’- মানে কলকাতার এক রাস্তার কুকুর। দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত পাড়ায় এক বিশাল অট্টালিকার লাগোয়া রাস্তায় ওকে কেউ ফেলে দিয়ে গিয়েছিল। তাই ঐ বাড়ির গায়েই গজিয়ে ওঠা এক চায়ের দোকানের মালিক সমর ওর নাম দিয়েছিল ফেলু। সমরই ওকে দু’বেলা খেতে দিত। রাতে ঐ দোকানটার সামনেই শুয়ে থাকত ফেলু আর গভীর রাতে অচেনা কাউকে পাড়ায় ঢুকতে দেখলেই চেঁচিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিত। ওর জন্য পাড়ায় ছিঁচকে চুরি প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ফেলুর চেহারাটিও হয়ে উঠল ভারী চমৎকার। বড় বড় ঝোলা কান, সাদা আর বাদামি লোমে ঢাকা তাগড়াই শরীর। পাড়ার সবজান্তা হরেনবাবু তো রায় দিয়েছেন- ফেলুর বাবা নিশ্চয়ই কোনো উঁচুজাতের ‘বিলিতি কুকুর’। পাড়ার সবাই- বিশেষত ছোট ছেলে-মেয়েরা ওর বন্ধু। তবে ওর দুটো বদভ্যাসও ছিল। পাড়ার রাস্তায় অচেনা কোন গাড়ি জোরে চললেই ও ঘেউ ঘেউ করে সেটাকে তাড়া করত। কারণ এরকম একটা গাড়ি ওকে একবার ধাক্কা মেরেছিল। এছাড়া কোনো অচেনা ভদ্রমহিলা ব্যাগ দোলাতে দোলাতে পাড়ার রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই ফেলু তাঁর পেছন পেছন গিয়ে ব্যাগটা চেটে দিত। এর ফলে অবশ্য মাঝে মাঝে খুবই ‘সংকটময় পরিস্থিতি’ দেখা দিত, কারণ ঐ সব ব্যাগধারিণী মহিলারা চরম আতঙ্কে চেঁচামেচি করে লোকজন জড়ো করে ফেলতেন। কিন্তু পাড়ার ‘ফেলুভক্ত’ জনগণ উল্টে ঐ মহিলাদেরই হতবাক করে দিয়ে বলতেন, দিদি (অথবা বৌদি), হলটা কী! ও-তো খালি আপনার ব্যাগটাই চেটেছে, আপনাকে তো চাটেনি, কামড়ায়ওনি। আপনি একদম ভয় পাবেন না, দেখছেন না, ঐ বরং  চিৎকারে ঘাবড়ে গিয়ে এককোণে চুপ করে বসে আছে। যে বিশাল অট্টালিকার সামনে ফেলুন আস্তানা ছিল, তার মালিক ছিলেন কোটিপতি ব্যবসায়ী সুখময় দত্ত। স্ত্রী শুভা, বারো বছরের ছেলে সৌমিত্র আর দশ বছরের মেয়ে পিংকি- এই নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ছেলে সৌমিত্র ফেলুর খুব বন্ধু হলেও সুখময়বাবু ফেলুকে একেবারেই পছন্দ করতেন না। একদিন গভীর রাতে ফেলুর প্রচন্ড চিৎকারে জেগে উঠে ব্যালকনিতে বেরিয়ে এসে সভয়ে সুখময়বাবু দেখলেন, তিনজন ষণ্ডামার্কা লোক তাঁর বাড়ির লোহার ফটক বেয়ে উঠবার চেষ্টা করছে। আর ফেলু প্রাণপণে চেঁচাতে চেঁচাতে লাফিয়ে তাদের কামড়ে, টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত ওর কামড় সহ্য করতে না পেরে লোকগুলো লাফিয়ে নেমে পড়ল। ইতিমধ্যে ফেলুর চিৎকার শুনে পাড়ার অন্যান্য বাড়ির লোকজনও রাস্তায় নেমে এসেছিল। বেগতিক দেখে লোকগুলো এবার পালাতে শুরু করল। কিন্তু ফেলু ওদের ছাড়ল না। ওদের লাথিতে ফেলুর একটা পা বেশ যখম হয়েছিল। তিন পায়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতেই ফেলু ওদের একজনের পা টেনে ধরে মাটিতে ফেলে দিল। লোকটা এবার মরিয়া হয়ে চোখের নিমেষে পকেট থেকে রিভলবার বার করে ফেলুকে পরপর দু'বার গুলি করল। মর্মান্তিক চিৎকার করে রাস্তার একপাশে ছিটকে পড়ল ফেলু। লোকগুলো কিন্তু পালাতে পারল না শেষ পর্যন্ত। একটা টহলদার পুলিশের গাড়ি উল্টোদিক থেকে এসে দাঁড়াল। গাড়ি থেকে সশস্ত্র পুলিশের দল নেমে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ল ঐ তিনটে লোকের ওপর। সুখময়বাবু ও পাড়ার লোকেরা কিন্তু আর সেদিকে নজর দিলেন না। তাঁরা রক্তাক্ত, অচেতন ফেলুকে তুলে নিয়ে গেলেন সুখময়বাবুর একতলার বৈঠকখানায়। ফোন পেয়ে বিখ্যাত পশুচিকিৎসক ডাঃ বসুরায় সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়লেন। ফেলুকে খুব ভালোভাবে দেখে ঘাড় নেড়ে জানালেন, না, সুখময়বাবু, কুকুরটার বাঁচার আশা একেবারেই নেই। গুলিতে ওর পাঁজরার তিনটে হাড় আর বাঁ পা’টা ভেঙে গিয়েছে। তাছাড়া প্রচুর রক্তপাতও হয়েছে। তাই- কিন্তু ফেলু মরল না। অসাধারণ প্রাণশক্তি ছিল ওর। সুখময়বাবুর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েরা কিছুতেই ফেলুকে কোনো পশু হাসপাতালে পাঠাতে রাজি হলেন না। বাড়িতেই সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেললেন। সবাই মিলে প্রায় চব্বিশ ঘন্টা ফেলুর পাশে থাকতে লাগলেন। অবশেষে ওঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে ও ভালোবাসায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এল ফেলু। তিন মাস পরে টলোমলো পায়ে উঠে দাঁড়াল সে। একদিন প্রায় ধরাধরি করে সামনের বাগানে নিয়ে আসা হল ফেলুকে। এখনো খুব দুর্বল। এই তিন মাস ওর কেটেছে যেন একটা ঘোরের মধ্যে। বাগানে এসে রোদে গা এলিয়ে শুয়ে পড়ল ফেলু। ওর ঘুম পাচ্ছে। ওর চারদিকে অনেক চেনা, অচেনা মুখ। কিন্তু ও অন্য একজনকে খুঁজছিল।

এমন সময় সবাইকে সরিয়ে ঠেলে এগিয়ে এল সমর, এসেই বসে পড়ে ফেলুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। খুশিতে, তৃপ্তিতে এতদিন পরে দুর্বল গলায় ডেকে উঠল ফেলু, ল্যাজটাও নাড়াতে লাগল। ও যাকে খুঁজছিল, তাকে পেয়ে গিয়েছে। প্রাণপণে সমরের হাতটা চাটতে লাগল ফেলু। তবে বেশিক্ষণ নয়। এখনও তো বেশ দুর্বল ও, ঘুমিয়ে পড়ল দেখতে না দেখতে।

- ধ্রুবজ্যোতি চৌধুরী

[:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp