Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

[:bn]সাহেব ভূতের গল্প[:]

July 28, 2018
[:bn]শিশির কুমার রায় আমার স্কুল- জীবনের সময়টা কেটেছিল মামাবাড়িতে। মামাবাড়ির গ্রামটা ছিল গাছগাছালিতে ভরা। নদীর পাড় ঘেঁষে বাদাবন বাঁশঝার বেশ একটা গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করেছিল। রাস্তাঘাট মোটেই ভালো ছিল না। এখানে থাকার সময়েই ঘটেছিল সেই ভূত দেখার ঘটনা। আমার সহপাঠী ছিল নাড়ু। ভালো নাম নাড়ুগোপাল। বরাবরই খুব ডানপিটে। ওর জ্বালাতে পাড়ার, গ্রামের, স্কুলের সবাই অস্থির। মনে কোনো ভয় ছিল না। সবাই বলত, শরৎচন্দ্র তোর কাহিনি শুনলে ‘লালু’ বদলে নাড়ুই লিখতেন। এই নাড়ু একদিন সন্ধ্যেয় এসে আমার দিদাকে বলল, কত্তামা, পাশের গ্রামে যাত্রা হচ্ছে, ‘নীলদর্পণ’। খুব ভাল যাত্রা। আমি পুনুকে নিয়ে যাব ন’টার সময়। তুমি আপত্তি কোরো না। সে কী রে? পথে যে সাহেব কুটির বাগান পড়বে। ওখানে শুনেছি ভূতের ভয়। ঘাড় মটকে দেয়। দিনের বেলাতেই লোকে ওই পথ মাড়ায় না। যে সাহেবকে লাঠিয়াল ভুলো বাগদি মেরেছিল সে নাকি নিশুতি রাতে ঘুরে বেড়ায়। অনেকবার পুনুর দাদুও দূর থেকে দেখতে পেয়েছে। ও সব কথা ছাড় তো। আমার পাল্লায় পড়লে দেখবে ওই ভূতের কী অবস্থা হয়। তুমি ভেবো না। সঙ্গে ভনাকেও না হয় নিচ্ছি। ভনা হল আমার মামাতো ভাই। দলে ভারী হওয়ায় দিদা আর আপত্তি করল না। নাড়ু ঠিক রাত্রি ন'টায় এসে হাজির। মামা ইসকুলের মাস্টারমশাই। প্রায় সব-সময়েই পড়াশোনা নিয়ে থাকেন। মামার ঘরে মামা হ্যারিকেনের আলোয় পড়শোনা করছেন। পা টিপে টিপে চললাম। যেন একটুও শব্দ না হয়। বাড়ি থেকে বের হতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। জ্যোৎস্না রাত। পথ সুন্দর দেখা যাচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে লাঠি। আধঘন্টার পথ। যাত্রা শুরু হবে দশটায়। তাড়া কিছু নেই। আমরাও পৌঁছে গেলাম। যাত্রাও যথাসময়ে শুরু হল। দীনবন্ধু মিত্রের কাহিনি অবলম্বনে যাত্রাপালা। সাহেবদের অত্যাচারে নীলচাষিদের মনে রাগ জমা হচ্ছে। এবার দল বেঁধে বিদ্রোহ। এবার প্রতিরোধ, প্রতিশোধ। অত্যাচারী দুজন সাহেবকে হত্যা করল চাষিদের সর্দার। একমনে বুঁদ হয়ে দেখছি এসব। যাত্রা শেষ হল। এবার বাড়ি ফেরার পালা। মাথার উপর চাঁদ। রাস্তা খুব ভালোভাবে দেখা যাচ্ছে। সেই লাঠিগুলো যাবার সময় একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম। আসার সময় ওগুলো আবার হাতে নিলাম। সোজা রাস্তা ছাড়িয়ে এসে পড়লাম সেই সাহেবকুটির বাগানে। নিশাচর প্রাণীদের আনাগোনা। দূর থেকে ভেসে আসছে কোনো এক নাম- না- জানা পাখির কর্কশ আওয়াজ। পায়ের নীচ দিয়ে কী একটা যেন চলে গেল। হঠাৎ দেখি বাগানের ঠিক মাঝখানটায় কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। খুব বড় আকৃতির একটা মানুষ। তার সারা শরীর ফটফটে সাদা। মাথায় হ্যাট। হাত- পাগুলো নাড়ছে। একটা ক্যার ক্যার আওয়াজ হচ্ছে। আমি ভয়ে নাড়ুর হাতটা জোরে ধরলাম। ভনা ঐ দৃশ্য দেখে ভয়ে কাঁপছে ঠকঠক করে। ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। জীবনের আজই হয়তো শেষ দিন। ঠিক যাত্রায় দেখা সাহেবের মতো চেহারা। ওরা কত হিংস্র জানতে তো বাকি নেই। এই সদ্য দেখে ফিরছি। দিদিমা ঠিকই বলেছে সাহেব ভুত ঘাড় মটকে রক্ত খায়। এখুনি আসবে আমাদের ঘাড় মটকাতে। ছুটে পালাব কী, দাঁড়াবার ক্ষমতাও নেই। ভনা হঠাৎ আঁ-আঁ করে মাটিতে পড়ে গেল। এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব কিছু দেখছিল নাড়ু। প্রথমটায় হয়তো ও একটু ভয় পেয়েছিল তারপর বলল, তুই ভনাকে দেখ আমি আসছি। লাঠিটাকে নিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল নাড়ু। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে আছি। এইভাবে কাটল বেশ কিছুটা সময়। হঠাৎ হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল নাড়ু। দেখলাম ও সাহেব ভূতটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বলল- আয় আয়, কোনো ভয় নেই। ভূতটা দেখে যা। এখন ভনার ভয় ও অনেকটা কেটেছে। সামনে গেলাম। হাতের লাঠিটা তখনও ছাড়িনি। কাছে গিয়েই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম। কিছুদিন আগে এই জায়গাটায় একটা বহু পুরোনো আমগাছকে কাটা হয়েছে। কাটা অংশটা খুব সাদা। চাঁদের আলো সেখানে পড়ে সোজা উপরের দিকে উঠেছে আলোর প্রতিবিম্ব। তেরছা হয়ে চাঁদের আলো পাশের আমগাছের ডালে লেগে একটা ছায়া সৃষ্টি করেছে। হাওয়ায় পাতা যত নড়ছে মনে হচ্ছে যেন হাত-পা নাড়ছে। মৌচাকের ছায়ায় যেন তৈরি হয়েছে হ্যাট। দুটো বাঁশের ঘর্ষণে শব্দ হচ্ছে ক্যার ক্যার। নাড়ু বলল, ওরে সাহস না থাকলে আজ তো তিনজনেই ভয়ে অক্কা পেতাম। সাহস দেখাতে শেখ। তা না হলে জীবনে কিছুই করতে পারবি না। ভোর হয়ে আসছে। সকলে পা বাড়ালাম বাড়ির পথে।[:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp