[:bn]একই সময়ে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ ও পূর্ণ সূর্যগ্রহণ[:]

[:bn]একই সময়ে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ ও পূর্ণ সূর্যগ্রহণ[:]

April 3, 2018

[:bn]নিবন্ধের এমন নামকরণ দেখে অনেকেরই চোখ কপালে উঠে গেছে নির্ঘাত। ওঠারই কথা, এতে হেঁয়ালি আছে, কিন্তু ভুল নেই কোনো।  তাহলে, একেবারে আসল কথায় চলে আসি। ২০১৮ সালের ৩১ শে জানুয়ারি পৃথিবীর যেসব জায়গা থেকে ‘পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ'( total luner eclipse) দেখা যাবে, তার মধ্যে কলকাতায় আছে।

ঐদিন ভারতের প্রমাণ সময় ( IST) ১৬: ২১ : ১৩-য় অর্থাৎ বিকেল চারটে বেজে একুশ মিনিট তেরো সেকেন্ডে চাঁদ পৃথিবীর উপচ্ছায়ার(Penumbra) মধ্যে প্রবেশ করবে। কিন্তু দিগন্তরেখার(horizon) নিচে থাকার দরুন কলকাতার আকাশে তখন চাঁদকে দেখা যাবে না।

সেসময় পৃথিবীর যেসব স্থানে (অবশ্যই কলকাতা থেকে পুবে) চাঁদ দিগন্তরেখার উপরে থাকবে, সেই সব স্থান থেকে দেখতে পাওয়া চাঁদের উজ্জ্বলতা ক্রমশ কমবে। একে বলে উপচ্চ্ছায়া-গ্ৰহণ(Penumbral  eclipse)। উজ্জ্বলতা কম হওয়ার কারণ, সূর্যের সব অংশ থেকে চাঁদ আলো পাবে না। এরপর যত সময় যাবে… চাঁদ পৃথিবীর প্রচ্ছায়া শঙ্কুর ( umbral cone)  দিকে যত এগোতে থাকবে, ততই তার উজ্জ্বলতা কমবে।

চাঁদ যখন প্রচ্ছায়া-শঙ্কু স্পর্শ করবে তখনই শুরু চাঁদের খন্ডগ্রাস(partial luner eclipse)। কলকাতার আকাশে চাঁদের খন্ড গ্রাস আরম্ভ হবে ১৭ : ১৮ :  ২৭-এ  এবং চাঁদ তখন দিগন্ত রেখার উপরে থাকায় কলকাতা থেকে খণ্ড গ্রাস দেখা যাবে।

চাঁদপুর পুরোপুরি পৃথিবীর প্রচ্ছায়া শঙ্কুর মধ্যে প্রবেশ করবে ১৮ : ২১ : ৪৭-এ অর্থাৎ, তখনই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের শুরু। তারপর চাঁদ শঙ্কুর মাঝামাঝি পৌঁছবে(maximum eclipse ) ১৮ : ৫৯ : ৫১-য়। আর পৃথিবীর প্রচ্ছায়া শঙ্কু থেকে চাঁদের বেরোনোর শুরু ১৯ : ৩৭ : ৫১-য় অর্থাৎ, পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের তখনই সমাপ্তি।

তারপর চাঁদ  প্রচ্ছায়া-শঙ্কু থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসবে ২০ : ৪১ : ১১-তে মানে তখন চাঁদের খন্ডগ্রাস শেষ এবং তারও পরে  ২১ : ৩৮ : ২৯-এ  চাঁদ থেকে উপচ্ছায়া থেকে যখন বেরোবে, তখন উপচ্ছায়া-গ্রহণও শেষ।  দেখা গেল কলকাতায় পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের স্থিতিকাল ১ ঘন্টা ১৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। ১৮ : ২১ : ৪৭ : থেকে  ১৯ : ৩৭ : ৫১ : পর্যন্ত।    এবার নিবন্ধের নামকরণের বিষয়ে ফিরে আসা যাক। যে সময় ধরে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ চলছিল, সেই সময়ে পৃথিবীর দিকে থাকা চন্দ্রপৃষ্ঠে যদি কোন নভোচর(astronaut)  উপস্থিত হত, তাহলে সে দেখতে পেত পূর্ণ সূর্যগ্রহণ, কারণ চাঁদ আর সূর্যের মাঝে পৃথিবী অবস্থিত থেকে সূর্যকে পুরোপুরি আড়াল করে রেখেছে। তার মানে– একই সঙ্গে একই সময়ে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ দৃশ্যমান হচ্ছে পৃথিবী থেকে আর চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। আসলে, হেঁয়ালি এই স্থান পার্থক্যেই …… নিবন্ধের নামকরণ তাই নির্ভুল।  সেদিন মানে ২০১৮-র ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টা ২১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড থেকে কলকাতায় যখন পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে যাবে, তখনও আকাশে চাঁদকে দেখতে পাওয়া যাবে। কিন্তু কেন ? — দেখার তো কথা নয় ! চাঁদ সেই সময় থাকবে পৃথিবীর প্রচ্ছায়া শঙ্কুর ভিতরে এবং তার ফলে সূর্য থেকে চাঁদে সরাসরি আলো যাওয়া পৃথিবীই   প্রতিহত করবে, সূর্যরশ্মির ছিটেফোঁটাও চন্দ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর কথা নয় আর তাই সম্পূর্ণ অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় আকাশে চাঁদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা জানি, তা হয় না……. সেদিনও হবে না। চাঁদকে তামাটে লাল-বর্ণের(coppery red) থালার মতো দেখা যাবে। এর কারণ কি ?- কেন এমন হয় ?- উত্তরটা কঠিন হয়। পৃথিবীকে ঘিরে থাকা বায়ুমন্ডলের ভিতর দিয়ে সূর্যের আলোক রশ্মি প্রতিসৃত হয়ে বেঁকে অন্ধকারাচ্ছন্ন চন্দ্রপৃষ্ঠের ওপর পড়ে এবং এই আলোকে লাল দেখায়, কারণ সূর্যের আলোর সাতরং-এর মধ্যে লাল কমলার তুলনায় নীলও অন্যান্য রঙের আলোর বেশি বিচ্ছুরণ ঘটে আর তার ফলে চাঁদে পৌঁছয় লাল-কমলা আলো। আজকাল এর লাল রঙের জন্য  পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের চাঁদকে বলা হয় ‘Blood Moon’।

চন্দ্রপৃষ্ঠের সব জায়গায় আলোক প্রতিফলন-মতা(reflecttivity)এরকম নয়। কোথায় কম, কোথায় বেশি।তাই তামাটে লালবর্ণের থালাটির কোনও অংশ ধূসর-ম্লান, কোনও অংশ সে তুলনায় বেশি উজ্জল।

যদি পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল (atmo-sphere) না থাকত, তাহলে অবশ্যই পূর্ন চন্দ্রগ্রহণ চলাকালীন সময়ে আকাশে চাঁদ দেখাই যেত না।
এবার চাঁদে দাঁড়িয়ে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখার কথায় ফিরে আসছি। চাঁদ থেকে কি করোনা (corona) এবং হিরের আংটি (diamond ring) দেখা যাবে ?
জবাবে বলব –পৃথিবী আকারে এতটাই বড় যে, সূর্যের আলোকমণ্ডল(photo-sphere) তো বটেই, করোনা-কেও সম্পূর্ণ ঢেকে ফেলবে এবং তাই করোনা দৃশ্যমান হবে না। তবে, অন্ধকারাচ্ছন্ন সূর্য-চাকতিকে(solar-disc) ঘিরে স্বল্প উজ্জ্বলতার লাল-কমলা রঙের আলোক-বলয় থাকবে …. ওই যে আগেই বলেছি, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল- কর্তৃক সূর্যরশ্মির প্রতিসরণ ও বিচ্ছুরণ ঘটার দরুন অমন অপরূপ বলয় দেখা যাবে।
‘পূর্ণ সূর্যগ্রহণ’-এর শুরু ও শেষের মুহূর্তে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে হীরের আংটিও দৃশ্যমান হবে, যেমনটা হয়ে থাকে পৃথিবী থেকে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখার সময়।
এ প্রসঙ্গে আর একটা কথাই বলার আছে। ২০১৮-র ৩১ জানুয়ারি পৃথিবীতে চাঁদের পূর্ণিমা আর চাঁদে সেদিন পৃথিবীর অমাবস্যা অর্থাৎ, পৃথিবীর অন্ধকারাচ্ছন্ন গোলার্ধই থাকবে চন্দ্রাভিমুখী …তাই পৃথিবী চাঁদ থেকে দৃশ্যমান হবে না।

   দেবব্রত দাশ

[:]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *