Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

খাই খাই কর কেন ?

March 3, 2018
[:bn]আমদের ছোটবেলায় আমরা শুনেছি সুকুমার রায়ের কবিতা ‘খাই খাই কর কেন, এস বসো আহারে,’ কিংবা হাসির রাজা নবদ্বীপ হালদারের সেই গান-‘আমি দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছি কেন বাবা?/এই অল্প আহারে,/শরীর আমার শুকিয়ে গেল/পোড়া লোকের নজরে।, কিন্তু এসব তো পুরনো দিনের কথা। আজকের ভাবনা, অন্তত ঘরে ঘরে আমরা যা শুনি, সে তো খাই খাই-য়ের জন্য নয়,খায় না খায় না-র জন্য।‘ছেলেটা কিচ্ছু খেতে চায় না ভাই,কি জে করি ওকে নিয়ে!’ ছিরি দেখেছেন মেয়ের? যা কিছু করতে বলো করবে,কিছু খেতে বলো,গায়ে জ্বর আসবে অমনি’। ‘ডাক্তারবাবু,কিচ্ছু খেতে চায় না ছেলেটা-কী করে বাঁচাই বলুন তো!’ এইসবই তো শুনি এখন মায়েদের মুখে,সুতরাং বেশি খাওয়ার জন্য বায়না,সেতা আবার আজকের সমস্যা হল কী করে! অথচ সমস্যাটা কিন্তু আজকেরই। খোকা-খুকুরা যতটা না, ধেড়ে খোকারা এবং ধেড়ে খুকুরা ইদানিংএই আসুখের কবলে ভীষণ পরেছেন।বয়স হয়ে গেলে ক্ষিধে কমে যায় এটাই আমরা শুনতে অভ্যস্ত,কিন্ত বয়স বাড়লে খাই খাই বায়নাও বেড়ে যায় এ আবার কোন বিদঘুটে রোগ রে বাব!কাজেই রোগটাকে চিনে রাখতে হবে, রোগ হলে কী কী উপসর্গ দেখা দেয় সেটা জানতে হবে এবং রোগটাকে কি করে তাড়াতে হয় সেটাও জানতে হবে।সেই চেষ্টাগুলোই করা যেতে পারে। খাই খাই রোগটা ইদানিং আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করলেও খুব নতুন নয়। আসুখটাকে শনাক্ত করেন আমেরিকার আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সিল হ্যারিস ১৯৪২ সালে। একটা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বা মহিলা দিব্যি খাওয়া দাওয়া করছেন, যে পরিমাণ খাওয়া তাঁদের পক্ষে যথেষ্ট ততটাই খাচ্ছেন, অথচ খাওয়ার পরেও খিদে মিটছে না। ডাক্তাররা বলেন একটা বয়েসের পর পেটে একটু খিদে রেখে খাওয়া উচিত- ব্যাপারটা সে রকমও নয়। পুরদস্তুর মধ্যাহ্ণভোজ বা নৈশভোজের পরও তাঁদের ক্ষিধে পায় এবং নিয়মিত খেতে হয় তারপরও, নইলে তাঁরা স্বাস্তি পান না। এর ফলে প্রায় সর্বদাই একটা ক্ষুধা বোধ হওয়ার অসুখে তাঁরা ভোগেন বটেই, টা সত্ত্বেও দিনের পর দিন এক ধরনের ক্লান্তি এবং অবসাদ তাঁদের গ্রাস করতে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে টা মৃত্যুরও কারন হয়ে দাঁড়ায়। খাই খাই অসুখটার নাম হচ্ছে ‘হাইপার ইন্সুলিজম’। ব্যাপারটা কি একটু ভাল করে বুঝিয়ে বলা যাক। আমাদের দেহের প্রত্যেক কোষের জ্বালানি হচ্ছে ‘সুগার’। দেহের প্রায় সর্বত্রই কোষগুলি সুগার পায় বিভিন্ন উপাদান থেকে, কিন্তু মস্তিষ্কের কোষগুলি সুগার সরাসরি পায় সুগার-গ্লুকোজ থেকে। অনান্য দেহ কোষের সাথে মস্তিষ্কের কোষের আর একটা তফাত হচ্ছে, অনান্য কোষ সুগার সঞ্চ্য করে রাখতে পারে,কিন্তু মস্তিস্ক-কোষকে নিরভর করতে হয় সেই মুহূর্তে সুগারের পরিমাণ কিরকম তার ওপর। ব্লাড-সুগারটা তাই শরীর ভাল রাখার জন্য নিয়ন্ত্রনে রাখা খুব দরকার।, কারন শ্বাসগ্রহনে যে বাতাস আমরা নই তার অক্সিজেন পোড়ায়  ওই সুগারই। দেহ বা মস্তিষ্ক যেখানেই হোক মূল সুগারের জোগান তো দেয় আমাদের খাবার-দাবার, তাই খাওয়া দাওয়া শুরু হলেই ভেতরের কলকব্জা গুল যে জটিল এবং বিচিত্র কাজকর্ম শুরু করে দেয়, তার একটা আভাস দিয়ে রাখতে হবে। রক্তে সুগার বেশি থাকলে তেতো-টেতো বেশি খাওয়া উচিত,এরকম একটা ধারনা আমাদের আছে। আসলে যে খাবারই আমরা খাই না কেন, জিভের দু’পাশের লালা বেরিয়ে তাকে গ্লুকোজে পরিণত করে।সব ধরনের খাবার কে অবস্য একি হারে করতে পারে না। কার্বোহাইড্রেটকে করে শতকরা একশোভাগ,প্রোটিনকে করে শতকরা ৫৬ ভাগ, চর্বিজাতীয় খাদ্যকে করে শতকরা ১০ ভাগ।রক্ত আমাদের অন্ত্র থেকে সেই গ্লুকোজ পৌঁছে দেয় প্যানক্রিয়াস  লালাগ্রন্থিতে।প্যানক্রিয়াসের  যে সব কোষ ইনসুলিন তৈরি করে এই অঞ্চলকে বলা হয় 'আইসল্যান্ড অফ  ল্যাঙ্গারহ্যান্স,' হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ব্লাড-সুগার  সেই অঞ্চলকে উত্তেজিত করে তৈরি করে ইনসুলিন নামক হরমোন--  সেটা সরাসরি চলে রক্তে চলে  যায়।এরপর ইনসুলিন চলে যায় যকৃতে,  বেশিরভাগ খাবার তখনও কিন্তু হজম হয়নি। যকৃত গ্লুকোজকে  পরিণত করে গ্লাইকোজেনে।গ্লাইকোজেন এক রকমের কার্বোহাইড্রেট  যা দরকার মতন যকৃত ব্যবহার করতে পারে। এড্রিনাল গ্রন্থির সাহায্যে আবার তাকে গ্লুকোজে  পরিণত করা যায়। মোটামুটি এই ভাবেই ব্লাড-সুগারের মাত্রা ঠিক রাখে যকৃত। খাওয়া শেষ  হবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গ্লুকোজ-গ্লাইকোজেন প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা বজায় থাকে। এই যে প্রক্রিয়ার কথা বলা হল, এ থেকেই মোটামুটি ভাবে বোঝা যাবে, ডায়াবেটিস রোগটার  আসল বৈজ্ঞানিক নাম হলো হাইপো -ইনসুলিন, মানে প্যানক্রিয়াসের ওই অঞ্চল যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে পারছেনা ; আর খাই খাই রয়েছে ঠিক তার উল্টো, হাইপার -ইনসুলিন, অর্থাৎ এই অঞ্চলটা খুব বেশি ইনসুলিন তৈরি করে ফেলছে।ফলে ব্লাড -সুগার যাচ্ছে কমে, যতই  খাওয়া-দাওয়া হোক ব্লাড-সুগারের মাত্রা বাড়ানো যাচ্ছে না।ফলে হচ্ছেটা কী !  অন্যান্য গ্রন্থের ও প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে-- এড্রিনাল ঢুকে যাচ্ছে রক্তে, হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে তাতে, রোগী মূর্চ্ছা যেতে পারে, আরো অনেক কিছুই হতে পারে। কী করে বুঝবো এই অদ্ভুত অসুখটা শুরু হয়েছে? প্রথমেই তো আর রাক্ষুসে  খিদে শুরু হবে না ! বুঝবার উপায় হচ্ছে, মাথাটা খুব হালকা হালকা লাগবে, প্রথম প্রথম ওতটা যদি নাও  লাগে, কয়েক বছরের মধ্যেই সেটা বেড়ে যাবে খুব বেশি, আর তার সঙ্গে শুরু হয়ে যাবে ওই খাই খাই ব্যাপারটা। তার সঙ্গে ক্লান্তিও খুব বেড়ে যাবে,  লক্ষ্য করবার মতো। আরো বাড়াবাড়ি দেখা যাবে, খেতে দিতে যদি দেরি হয় বা  বেশি খাটাখাটিতে রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি কমে যায়। ডঃ হ্যারিস  আরেকটা কারণ-এর কথা বলেছিলেন, ক্যাফিনের প্রতি আসক্তি ভালো, কিন্তু বেশি নয়। এবার রোগ প্রতিরোধের কথা একটু চিন্তা করা যাক, যদিও অসুবিধা সেখানেও আছে। আপনি বেশি পরিমাণে মিষ্টি খেতে পারেন, তাতে ওই যে 'ল্যাঙ্গারহ্যান্স' অঞ্চল সেটা বারবার উত্তেজিত হবে, বেশি কাজ করবে।ক্যাফিন অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে বেশি খরন ঘটায়। সেটা হলেই যকৃত বেশি গ্লাইকোজেন গ্লুকোজে পরিণত করবে এবং রক্তস্রোতে তা  মিশবে। এই কারণেই অসুখের বাড়াবাড়ি হলে অনেক সময় এক কাপ কফি রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে দেয়। মুশকিল যেটা সেটা হল, ল্যাঙ্গারহ্যান্স অঞ্চল তো কফি খাওয়ার সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাওয়ার তফাতটা ধরতে পারে না- তার কাছে সব সুগারই সুগার , সেটা সরাসরি আসুক আর খাবার হজম করে যে সঞ্চিত গ্লাইকোজেন রয়েছে, সেটা থেকেই আসুক। আসলে যেটা করতে হবে সেটা হল, ব্লাড সুগারের মাত্রাটা সঠিক রাখতে হবে, চিকিৎসা এটাই।ডাক্তাররা চিন্তা ভাবনা করে, সঠিক খাদ্যতালিকা ঠিক করে এই অত্যধিক খাই খাই- এর প্রবণতা আস্তে আস্তে কমাবেন। কেউ নিজে যদি ভাবেন কফি খাওয়া তো ভালো, খিদে পেলেই কফি খাও তাহলে ক্ষিদেতও মরে যাবে ক্যাফিনের মাত্রাও বাড়বে-- তাহলে তিনি কিন্তু নিজের ক্ষতি নিজেই করবেন। ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন, সঠিক খাদ্যতালিকা তিনিই  ঠিক করে দেবেন।

 বাক্যবাগীশ

[:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp