[:bn]দাম্পত্য মধুর হয় শরীরের গুনে [:]
[:bn]দাম্পত্য মধুর হয় শরীরের গুনে [:]
February 19, 2018[:bn]
‘শরীর শরীর —–তোমার কি মন নাই কুসুম’ পুতুলনাচের ইতিকথা উপন্যাসের শশীর এই উক্তি প্রবাদ হয়ে আছে, কারণ শশীকে দেখলে কুসুমের শরীর কেমন করে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোত্রের অগ্রজ সাহিত্যিক জগদীশ গুপ্তের ‘লঘুগুরু’ উপন্যাসে পাই — শরীরের সুখই আসল, মনের সুখও ঐ শরীরের সুখ থেকেই আসে। আরো খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন ভাওয়ালের কবি গোবিন্দ চন্দ্র দাস —- ‘প্রেমিক লম্পট মোরে যে কহ সে কহ \আমি তারে ভালবাসি অস্থি – মজ্জা সহ’।
এত কথা এবং আধুনিক সাহিত্যিকদের বচন উদ্ধার করার কারণ একটাই, মুখোরোচক বিষয়ের অবতারণা করা নয়, একটি সহজ সরল প্রশ্নের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজা । দ্বিচারিতা মানুষের সহজাত কিনা, পরকীয়ায় মানুষ বেশি আনন্দ পায় কিনা, শরীরী উষ্ণতার খোঁজে মানুষ বিভিন্ন উপায় সন্ধান করে কিনা, এসব কথা নয়, আদর্শ দাম্পত্য জীবন সম্বন্ধে বহুদিন ধরে যেসব নীতিবাক্যে আমাদের সুশান্ত ও সুভদ্র করে রাখা হয়েছে , বাস্তবিক তারা কতটা সত্য কথা খাটি। অর্থাৎ আমাদের বিষয়ে পরকীয়া নয় স্বকীয়া ; পরনারীর প্রতি আকর্ষণ নয়, নিজের বিবাহিত স্ত্রীর প্রতি সত্যিকারের আকর্ষণ; একটি আদর্শ দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে গেলে কি প্রয়োজন একটু সাদাচোখে বিচার করা।
না , একেবারে ‘নিকষিত হেম ‘,কামগন্ধ নেই ‘ যে প্রেমে সে প্রেম মানুষের দাম্পত্য প্রেম নয়, কিন্তু এরকম একটা ধারণা আমাদের মনে বদ্ধমুল করে দেওয়ার চেষ্টা আমাদের গুরুজনেরা করে থাকেন যে রূপ তো দুদিনের, আসলে হৃদয়ের যে বন্ধন, মনের সঙ্গে মনের যে মিল সেই হল দাম্পত্য সম্পর্কের মূল কথা। মনের সঙ্গে মনের মিলন , হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন — এ সব তো দাম্পত্য সম্পর্কের মূল কথা বটেই — যে নারীকে সামাজিক বন্ধনে জড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে মনের মিল না হলে সে তো স্বামী-স্ত্রী সেজে গতানুগতিক দিন যাপন করা,ঠিকই তো ! কিন্তু দেহকে যেভাবে তুচ্ছ মনে করা হয়, সে কি অতোটাই তুচ্ছ ? দাম্পত্য প্রেমে শরীরের কি কোনো ভূমিকাই নেই? বা যে ভূমিকা আমরা অস্বিত্বক্রমে মেনে নি ততটা গুরুত্বহীন কি তার ভূমিকা? তার উত্তর খোঁজার জন্যই আমরা আধুনিক সাহিত্যিকদের বচন উদ্ধার করেছি। বারবণিতার কাছে সকাতর আকুতি জানাতে এসেছিল সুবোধ ঘোষের গল্পের এক সাধ্বী স্ত্রী । বারবণিতা উত্তর দিয়েছিল ‘উনি যা চান আপনি তা দিতে পারলে তো ওঁকে আমার কাছে আসতে হয় না’। এইটাই হল আসল কথা স্বামী-স্ত্রীর একটা শরীরী চাওয়া-পাওয়ার দিকও আছে সেটাকে নীতি ধর্মের দোহাই পেড়ে যতই আমরা লুকিয়ে রাখি ,জিনিসটা কিন্তু মিথ্যে হয়ে যায় না।
এসব কথা আলোচনা করার একটাই মুসকিল ,আলোচনায় সেক্স ঢুকে গেলেই আমরা কেমন আড়ষ্ট হয়ে যাই, কেমন যেন একটা সনাতন ধর্ম ভেঙ্গে পড়ল এরকম ভাব। তাকে বিজ্ঞান সহজভাবে আমরা নিতে শিখলাম না , ছোটদের সামনে এই নিয়ে কথা বলতেও নিদারুণ অস্বস্তি,অথচ এই সাইবার -যুগে আপনার ক্লাস সেভেন বা এইটে পড়া ছেলে কতটা জানে সে সম্বন্ধে আপনার কোনো ধারনাই নেই। আপনি সহজ হলে ব্যাপারটাও সহজ হয় , আমরাই তাকে জটিল করে তুলি ।
মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি। একটা সরল সত্য স্বীকার করে নিন , নিজেকে ঠকাবেন না — সারাদিন স্ত্রী নামক যে নারীটির সঙ্গে আপনার দেখা হচ্ছে, কথা হচ্ছে, তাকেও পরিবারের করো বৌমা বা বৌদি হয়ে গার্হস্থ্য জীবন যাপন করতে হচ্ছে,রাতের বেলা অন্ধকার ঘরে তারা কিন্তু সেই সংসারের ঘেরাটোপে ঘোরা মানুষ নয়, দুটি শরীরী নরনারী। সেখানে যদি একটি শরীর অন্য শরীরের ভাষা না বোঝে, একটি দেহ অন্য দেহের উৎপাদনের সন্ধান না রাখে , তাহলে ওই হৃদয়ের বন্ধন আর মনের মিল সবই বিকল হয়ে যায়। কথাটা শুনতে সংস্কারগ্রস মনে বড় বেশি ফিজিক্যাল মনে হতে পারে কিন্তু মনকে চোখ ঠারবেন না, অধিকাংশ দাম্পত্য সম্পর্কই যে ফুলদানিতে সাজানো কাগজের ফুলের মত নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে তার প্রধান কারণ, একটি শরীরকে জাগাবার ভাষা অন্য শরীর জানা থাকে না। আধুনিক সাহিত্যে অনেক সময়ই দেখা যায় , আপাতসুন্দর মেড ফর ইচ -আদার স্বামী-স্ত্রীর একজন অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ল ,সফিস্টিকেটেড স্ত্রী স্বামীকে পরিত্যাগ করে অতি সাধারণ একটি মানুষকে বিয়ে করল। কেন হয় এরকম? সাহিত্যি তো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। আপনি অস্বীকার করলেই তা তো মিথ্যে হয়ে যায় না।
মোদ্দা কথা ‘শরীররম আদ্যম,’ এ কথা কথা ঋষি পুরুষরাও বলে গেছেন । স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যেহেতু মূলত একটা জৈবিক সম্পর্ক, দুজনকে কেবল হৃদয় বিনিময়ের সুভাষিতাবলী জানলে চলবে না, দুজনের শরীরী ভাষা- আরো স্পষ্ট করে বললে একটি শরীর কি করলে রোমাঞ্চিত হয়, আদরে উদ্দাম হয়ে ওঠে, চরম আনন্দ লাভ করে, সে কথাও জানতে হবে। কি করে জানবেন যে কথা? বই পড়ে সব রহস্যের সন্ধান করতে যাবেন না, শরীর দিয়ে শরীর অনুভব করতে চাইলেই বুঝে যাবেন আপনার কোন কাজটি সেই নারীকে আনন্দে বিহ্বল করে দিচ্ছে , তিনিও বুঝবেন ঠিক কোন স্পর্শ আপনাকে শরীরী সুখে ভরিয়ে দিচ্ছে। আমরা সময়ই মনে করি যৌন মিলনে বুঝি সেই পরম পরিতৃপ্তি এবং স্বামী হিসেবে সেই কর্তব্য পালন করেই আপনার দায়িত্ব শেষ। অনেক নারীর ক্ষেত্রেই একথা সত্য নয় বরং ছোটখাটো স্পর্শ, চুম্বন, বিশেষভাবে শরীরী সুখ জাগাবার চেষ্টা এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
এ বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে কিছু হয় না। শিখিয়েও কিছু হয় না। কয়েকটি ভুল ধারণা শুধু দূর করুন :
এক : প্রাক -মিলন আদর -আলিঙ্গন করতে গিয়ে যদি মূল ব্যাপারটা পর্যন্ত পৌঁছনোই না যায়? চিন্তা নেই, আনন্দ আপনিতো পেলেনই স্ত্রীও তাতে ক্ষুন্ন হবেন না ।
দুই :চরম আনন্দের শিহরনই একমাত্র কাম্য নয়। কারো ক্ষেত্রে তা একাধিকবার ঘটতে পারে, কারো একবারও না। এতে নিবিড় সাহচর্য আনন্দহীন হয়ে যায় না।
তিন :ছেলেরাই শুধু পর্নোগ্রাফি, উত্তেজক গল্প ও ছবি ভালবাসে না , মেয়েদেরও তা সমান পছন্দ।
চার : যে উইথড্রয়াল মেথডকে আপনি অত্যন্ত নিরাপদ মনে করছেন, সেটা আদৌ নিরাপদ নয়, এ বিষয়ের যার সঠিক জ্ঞান আছে তিনিই আপনাকে এ কথা বলতে পারবেন ।
চার : বয়স বেড়ে গেলে কারো কারো এসব ব্যাপারে উৎসাহ কমে যায়, কিন্তু দাম্পত্য সম্পর্ক তাজা রাখতে গেলে নিয়মিত আদর- ভালোবাসা অত্যন্ত প্রয়োজন। চরম পরিতৃপ্তিই যৌন মিলনের লক্ষ্য, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করুন । শরীরি উষ্ণতা উপভোগ করেও কম আনন্দ পাওয়া যায়না। স্ত্রীও এমন কথা মনে করার অবকাশ পান না তিনি বুড়িয়ে গিয়েছেন বলে তার প্রতি আপনার আকর্ষণ ফুরিয়ে গিয়েছে।
আর বেশি বলার দরকার নেই। মনে রাখবেন শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন বিবাহের একটা অনিবার্য ভিত্তি, এটাই সত্যি— এটা তৈরি হল, অর্থাৎ দুজন দুজনের শরীরকে উদ্দীপিত করতে পারেন, তার মানেই দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত তৈরি হয়ে গেল। এ থেকেই হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব হবে ,মনের সঙ্গে মনের মিলন অক্ষয় হয়ে থাকবে।
বাক্যবাগীশ
[:]