Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

[:bn]দৃষ্টির আড়ালে[:]

July 7, 2018
[:bn]সুচিত্রা ভট্টাচার্য ট্রেনের কামরায় আজও লোকটাকে বসে থাকতে দেখে মাথায় রক্ত উঠে গেল বৈশাখীর। আজও ঠিক সেই রকম নির্বিকার মুখে বসে আছে। বৈশাখীর বাবা গত আশ্বিনে সোনারপুর স্টেশনের গায়ে  বাড়ি কিনেছেন। বৈশাখী পড়ে শেয়ালদার কাছে একটা কলেজে। আগে যখন ওরা মৌলালিতে  বাড়ি ভাড়া করে থাকত তখন কলেজ যাওয়ার কোন অসুবিধাই ছিল না, কিন্তু এই ক'মাস সত্যিই   খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। সময়মত ট্রেন ধরে কলেজ আসা, আবার সময়মত ট্রেন ধরে বাড়ি ফেরা। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ছুটির পর মজা করে আড্ডা দেওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে। মেজাজটা তাতেই একটু  বিগড়ে থাকে বৈশাখীর, তার ওপর ট্রেনে এই এক আপদ। মাস দুয়েক ধরেই লোকটাকে লক্ষ্য করছে। আর এমনই ওর কপাল, বেশির ভাগ দিনই  ফেরার সময় এই কামরাতেই উঠতে হয় তাকে। কী করবে?  বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে গল্প করতে করতে খেয়ালই থাকেনা ট্রেনের সময়টার। আর যেই খেয়াল হল, অমনি ছোটো। প্রায় রোজই   ট্রেন তখন ছাড়ার মুখে। বাধ্য হয়েই শেষের কামরাটাতে এসে উঠতে হয় তাকে আর ওই  লোকটার অসহ্য চাহনি সহ্য করতে করতে এতটা যেতে হয়। লোকটার যেন  লজ্জাসরমের কোন বালাই নেই। বয়স তো প্রায় পঞ্চাশের ওপর, তবু শখ দেখ না। সারাটা রাস্তা বৈশাখীর দিকে এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে যে দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যায়। আবশ্য ছেলেছোকরারা তাকালে বৈশাখীর অতটা খারাপ লাগে না। সে তো পর্দাসীন নয়, আর তাছাড়া নিজের সৌন্দর্য সম্বন্ধেও যথেষ্ট সচেতন ও।  তাই তরুণ কেউ মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালে বেশ ভালোই লাগে ওর। ইচ্ছে করে উদাসীন ভাব দেখায় আর আড়চোখে দেখে,  ছেলেটা দেখছে কিনা। তা বলে বৈশাখী প্রেমে পড়ে যাবে কারুর তাও নয়। বৈশাখী প্রতিজ্ঞা করেছে, মা-বাবা কে সে কোনদিন দুঃখ দেবে না। সে তো দেখেছে, দিদি ভালবেসে বিয়ে করেছিল বলে কত অশান্তি গেল বাড়িতে। আর দিদি যেদিন বাড়ি থেকে রাগারাগি করে চলে গেল, উঃ, কি কান্না সেদিন বাবা-মার। না, বৈশাখী বাবা-মার ওপর বিশ্বাসঘাতকতা করবেই না। বাবা যার সঙ্গে বিয়ে দেবে, তাকেই সে মেনে নেবে। অবশ্য ও ভালমতনই জানে, যেমন-তেমন ছেলের হাতে মোটেই তুলে দেবে  না তাকে বাবা-মা। ইতিমধ্যে বাবা যে কত সম্বন্ধ নাকচ করলেন ছোটখাট  খুঁত ধরে। বাবার মতে, ছোট জামাই হবে একেবারে নিখুঁত। তাই তো বৈশাখী রাস্তাঘাটে ছেলেদের খুব একটা আমল দেয় না। একটু চোখে খেলানো, বড় জোর একটু হাসি- তার বেশি প্রশ্রয় ও কাউকেই দিতে রাজী নয়। কিন্তু তা বলে ঐ লোকটা? পঞ্চাশের ওপর যার বয়স? দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হয়। কোঁচানো ধুতি, পাটভাঙ্গা পাঞ্জাবি, চোখে একটা মোটা ফ্রেমের চশমা। মাথাটা চুল উঠে উঠে অবশ্য একেবারে পাকাবেলের মতন হয়ে গেছে, তবু ভদ্রলোককে সৌম্যদর্শনই মনে হয়। কলেজে বন্ধুদের কাছে গল্প করতে, ওরা একেবারে খিলখিল করে হেসে উঠেছিল। বিনীতা বলেছিল, ''ওরে বৈশাখী, লোকটা বোধহয় মহাদেব। বুড়ো শিব কচি পার্বতীকে-'' ''থাম্ তুই।'' বৈশাখী রেগে উঠে বলেছিল, ''আমার অবস্থায় পড়লে বুঝতিস কেমন লাগে।''       ''তুই এবার চোখ মেরে দিবি।'' বিনীতা আরও জোরে হেসে উঠেছিল। আসলে ওর বন্ধুরা গুরুত্বই দিতে চায় না ব্যাপারটার, ব্লে,''তাকাল তো তাকাল, তুই পেছন  ফিরে বসে থাকবি, এক কামরা লোকের মাঝে বেশী কিছু করতে সাহসই হবে না লোকটার।'' তবু বৈশাখীর বুকের ভেতরটা কেমন ছমছম্ করে। কে জানে, কি মতলব লোকটার? আর ঠিক ঐ শেষের কামরাটাতেই উঠে বসে থাকবে। জানে, বৈশাখী এই চারটে চল্লিশের গাড়িতে ফিরবেই। আর শেষ সময়ে ঐ কামরাটা ছাড়া গতিও নেই বৈশাখীর। নিজের মনেই ভাবে সে। ভাবে আর রাগে জ্বলে ওঠে। লোকটার মুখের ওপর দু'চারটে কথা যে শুনিয়ে দেবে,সে সাহসও ঠিক হয় না। লোকটার মধ্যে কেমন যেন খুবই ভদ্রলোক  ভদ্রলোক ভাব। তাকানটাও যে খুব অশালীন তাও নয়। শুধু মুগ্ধ দৃষ্টিতে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। না, বৈশাখী লক্ষ্য করেছে, লোকটার দৃষ্টি মুখ ছেড়ে নীচে নামে না। ইয়াং ছেলেগুলো তো মুখ দেখার আগে বুকের দিকে তাকায়। এতদিনের অভিজ্ঞতায় এ সব বুঝে গেছে বৈশাখী। অবশ্য নিজের গুরুভার যৌবনের জন্য মনে মনে গর্বিতও ও। একে সুন্দরী, তায় যৌবনবতী, ছেলেরা তো একটু হ্যাংলার মত তাকাবেই। লোকটা বোধহয় সোনারপুরের পর কোথাও নামে। বৈশাখী তাকিয়ে দেখল, আজও ঠিক একই ভাবে ওর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে লোকটা। মাঝে মাঝে চোখ ঘোরালেও আবার  ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে। বৈশাখী চোখ ঘুরিয়ে নিল। ট্রেন শেয়ালদা ছেড়েছে সবে। কতক্ষণে যে সোনারপুর আসবে। কামরাটাও আজ কেমন ফাঁকা ফাঁকা। বুকটা ঢিপঢিপ করতে থাকে বৈশাখী্র। প্রাণপণে একটা বই খুলে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু চোখ দুটোও এত অবাঢ্য-ফিরে ফিরে ই দিকেই চলে যাচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গেই চোখাচুখি। লজ্জায়, ঘৃণায়, আতঙ্কে মরমে মরে যেতে থাকে ও। সোনারপুর এল। কিন্তু একি! লোকটা আজ তার সঙ্গেই নেমে পড়ল যে? মতলবটা কি? পিছু নেবে? সর্বনাশ। তাহলে তো বাড়িও চিনে যাবে? স্টেশন থেকে বেরোতে বেরোতে আড়চোখে দেখে বৈশাখী। আরে পেছন পেছনই তো আসছে। থরথর করে সারা শরীর কেঁপে ওঠে বৈশাখীর,চেচাতেও ভুলে যায়। ঠিক তখনই পাশে এসে দাঁড়ায় লোকটা, ''তোমাদের বাড়ি কোন্ দিকে?'' কি স্পর্ধা। বাড়ি জানতে চায়। আবার 'তুমি তুমি' করছে সোজাসুজি। বৈশাখী ঝলসে ওঠে। ''কি দরকার আপনার?'' ''তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।'' লোকটা নির্লজ্জের মত মিটিমিটি হাসে। ''আপনার সাহস তো কম নয়।'' আগুন ঝরে বৈশাখীর গলায়। লোকটা এবারও হাসে, ''বাঃ, তুমি বেশ সপ্রতিভও আছ দেখছি। এমনটিই তো আমি চাইছিলাম।'' ''কি বললেন?'' চিৎকার করে উঠতে গিয়ে থমকে যায় বৈশাখী। লোকটার গলায় তেমন লাম্পট্য নেই, কেমন যেন স্নেহ স্নেহ ভাব। বৈশাখীকে হঠাৎ রাজ্যের ভয় এসে চেপে ধরে। লোকটা কি ধরনের কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না। বাড়ির দিকে দৌড় লাগায়। পেছন ফিরে তাকাতেও ভয় হয়। দু'দিন বাড়ির থেকে বেরোতে পারে না। আবার যদি দেখা হয়। আরও বাড়াবাড়ি করে যদি কিছু। না, এবার বাবা-মাকে জানাবে ও। দরকার হলে থানা-পুলিসও করবে। লোকটার ভয়ে বাড়িতে বসে থাকার মানেই হয় না কোন। দু'দিন পর আবার কলেজ যায়। কিন্তু আশ্চর্য। ফেরার পথে লোকটি আজ আর নেই কামরায়। সেই শেষ কামরাতাতেই তো উঠেছে ও। ট্রেনের ছাড়ার পর নিশ্চিন্ত হয়। যাক,লোকটা বোধহয় নিজেই সরে গেছে। বুঝেছে, বোধহয় বৈশাখীর সঙ্গে ঠিক সুবিধে করা যাবে না। দরকার হলে থানা- পুলিসও করতে পারে বৈশাখী। স্টেশন থেকে নেমে বেশ খুশী মনে বাড়ির দিকে ছুটে চলে সে। এতদিনে বেশ নিশ্চিত হওয়া গেছে। লোকটা অসভ্যতাও করবে না- তাকিয়ে তাকিয়ে শুধু দেখবে। এ যেন আর ও অসহ্য। কিন্তু একি! বাবা বাইরের ঘরে কার সঙ্গে হেসে হেসে গল্প করছেন? সেই লোকটা না?  চমকে ওঠে বৈশাখী। বাবা কি মতলব বুঝতে পারেন নি লোকটার? নাকি ভদ্রলোক সেজে কোন ছুতোয় বাবার কাছে এসে আলাপ জমিয়েছে? পর্দার ওপাশে, দরজার আড়ালে এসে দাঁড়ায় বৈশাখী। লোকটা বলছে, ''তা যা বলুন মশাই, মেয়েটির মধ্যে আপনার কোনো বেচালপনা নেই। দু'মাস ধরে দেখছি- কলেজ আসে,  যায়, কোন ছেলে- ছোকরার সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করে না। আমার তো মশাই খুব ভাল লেগেছে আপনার মেয়েকে।'' বৈশাখী শোনে, বাবা বলছেন,ঐ মেয়েটিকে পার করে দিতে পারলেই আমি দায়মুক্ত হই। মেয়েকে আমার আপনার পছন্দ হয়েছে তা হলে?'' ''পছন্দ বলে পছন্দ। ''লোকটা প্রাণ খুলে হাসে, ''দু'মাস ধরে মশাই ওর দিক থেকে আমি চোখ ফেরাতেই পারি নি। আহা, কি রূপ।'' কি ব্যাপার? কি বলতে চায় লোকটা? বৈশাখী এবার সন্দিহান হয়ে ওঠে। লোকটা তখনও বলছে, ''আপনার মেয়ের সঙ্গে দু'দিন আগে, ঠিকানা জানার জন্য কথা বলতে গেলাম। ওরে বাবা। ফোঁস করে উঠল। ঠিকই তো, যাকে-তাকে ঠিকানা না দেওয়াই তো বুদ্ধিমতীর কাজ। তাই দেখে আরও ভাল লাগল। ওকে আমি নেবই ঠিক করে ফেললাম। তারপর পাড়াপড়শীর কাছে খোঁজ নিয়ে  একেবারে নিশ্চিন্ত।'' ''কি রকম?'' বাবা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন। ''মানে তো খুব সোজা মশাই।'' লোকটা হইহই করে হেসে ওঠে, ''খোজ নিয়ে জানলাম, জাত- গোত্র কোনদিক থেকেই আটকাবে না এ বিয়ে।'' বৈশাখী যেন ভীষণ ধাক্কা খায় একটা। কি সাহস লোকটার? বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ষাট বছরের বুড়ো? আর বাবাও কি খুশি। বাবার ওপর বিশ্বাস করার এই ফল?শেষ পর্যন্ত ঐ বুড়োটার সঙ্গে- ছি-ছি-ছি। চোখে জল এসে যায় বৈশাখীর। এতক্ষণ পর মার গলা শোনা যায় ঐ ঘরেরই ভেতর থেকে, ''আমার মেয়ের এত বেশী প্রশংসা করছেন যে আমরা এবার লজ্জা পাচ্ছি। আপনার ছেলেটিই বা কম কিসে? বিলেত থেকে ডাক্তারি পাস করে এসেছে, ছবি যা দেখালেন, আমার মেয়ের থেকে তো হাজার গুণ সুন্দর। আপনার একমাত্র ছেলে, সে তুলনায় আমাদের মেয়ে তো কিছুই নয়। বারবার বলে আর লজ্জা দেবেন না।'' হাত থেকে খাতা-বই সব খসে পড়ে যায় বৈশাখীর।এ কি শুনছে সে? এক দৌড়ে ছুটে পালাতে গিয়ে পায়ে কাপড় আটকে পড়ে যায়। সেই শব্দে ওঁরা কেউ ঘর থেকে বেরিয়ে আসার আগেই নিজের ঘরের দরজায় পৌঁছে যায়। ঘরে ঢোকার মুখে আড়চোখে শুধু দেখে,সেই এক জোড়া চোখ এখনও মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।[:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp