Menu

Min. Order value - INR 300 Delivery Charges Within Kolkata - Free In WB (outside Kol)- INR 75 EZ( Ori, Bih, Jhar) - INR 100 Others In India - INR 150 Outside India - on actuals

[:bn]পুন্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়[:]

June 28, 2018
[:bn]মলয় রায় বর্তমান বানলাদেশের বগুড়া শহর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে রয়েছে মহাস্থানগড় নামক একটা প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। পুরো দুর্গ বা গড় অঞ্চলটা আশেপাশের অঞ্চল থেকে পাঁচ মিটার উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পাঁচিল-ঘেরা  এই অঞ্চলটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বায় ১৫২৫ মিটার আর পূর্ব-পশ্চিমে চওড়ায় ১৩৭০ মিটার। পাঁচিলের স্থানে স্থানে সৈন্য অবস্থানের জন্য বর্ধিত অংশ। পাঁচিলঘেরা এই অঞ্চলের স্থানীয়ভাবে একসময় নাম হয়ে যাবে জাহাজঘাটা। পাঁচিলের বাইরে তিনদিক ঘিরে পরিখা, যা বর্তমানে বোরো চাষের ক্ষেত আর পশ্চিমদিকে করতোয়া নদী। আর দুর্গ অঞ্চলের বাইরে প্রায় নয় কিলোমিটার বিস্তৃত অর্ধবৃত্তাকার অঞ্চলের স্থানে স্থানে ছিল কয়েকটা ধাপ বা ঢিবি। নামগুলো হলো গোবিন্দ ভিটা, তোতারামের ধাপ, নরপতির ধাপ, গোকুল মেধ, স্কন্ধের ধাপ, খুলনার ধাপ, ইত্যাদি। আর বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘিরে থাকা আর একটা পরীখারও সন্ধান পাওয়া যায় যার নাম ভীমের জঙ্গল। ১৯২৮ এবং ১৯২৯ সালে দু'বছর ধরে এখানে খননকার্য চালায় তৎকালীন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ,  বিশিষ্ট পন্ডিত কে. এন. দীক্ষিতের তত্বাবধানে। প্রাথমিকভাবে জাহাজঘাটার ভেতরের মুনির ঘর এবং বৈরাগীর ভিটায় খননকার্য চালানো হয়। এরপর কয়েক বছর বন্ধ থাকে খননের কাজ। ১৯৩৪ এবং ১৯৩৫ সালে আবার খননকার্য চালানো হয় বৈরাগীর ভিটা এবং গোবিন্দ ভিটায়। আবার বন্ধ হয়ে যায় খননকার্য। ইতিমধ্যে ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চল হয়ে যায় স্বাধীন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের অন্তর্গত। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানি পুরাতত্ত্ব বিভাগ খননকার্য চালায় পরশুরামের প্রাসাদ, মনকালির ধাপ এবং একটু দূরের মাজার অঞ্চলে। এ-ছাড়াও দুর্গ অঞ্চলের জিয়ৎ কুন্ড এবং দুর্গের সমতল অঞ্চলে নমুনা খননকার্য করা হয়। এরপর ১৯৬৫ সালে আবার বন্ধ হয়ে যায় খননকার্য। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন বাংলাদেশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ সরকার ও ফরাসি পুরাতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে হওয়া এক চুক্তির মাধ্যমে ফরাসি সহযোগিতায় নতুন করে শুরু হয় যৌথ খননকার্য। ১৯৯২ সাল থেকে হাজার ১৯৯৮ এই ৭ বছর ধরে চলে সতর্ক খননকার্য জাহাজঘাটাযর গেট থেকে বৈরাগীর ভিটা পর্যন্ত এবং মাজার অঞ্চলের আশেপাশে। বেরিয়ে আসে অনেক প্রাচীন স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও গৃহস্থালির জিনিসপত্র, অলংকার-সামগ্রী এবং অসংখ্য মৃৎপাত্রের টুকরো। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হল একটি প্রস্তর ফলক লম্বায় পাঁচ দশমিক সাত সেন্টিমিটার এবং চওড়ায় চার দশমিক চার সেন্টিমিটার। এই ফলকে প্রাকৃত ভাষায় ব্রাহ্মী লিপিতে লেখা রয়েছে একটি রাজকীয় অনুজ্ঞা। এই প্রস্তর ফলক হঠাৎ করেই পেয়ে গিয়েছিলেন এক শ্রমিক। অনুমান করা হয় এই রাজকীয় অনুজ্ঞা মগধ সম্রাট অশোকের। মূলত এই প্রস্তর লেখা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি অন্তত কমপক্ষে খ্রীঃ পূঃ তিন শতকের আগে থেকে শুরু। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হল অভিভূত করা মুদ্রা - সেগুলোর বয়স ধরা হয় খ্রীঃ পূর্ব চতুর্থ শতক থেকে খ্রিষ্টাব্দ দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত। কিছু প্রাচীন তাম্রমুদ্রা ও দুটো গুপ্তযুগের মুদ্রাও  পাওয়া যায়। আর ইঁটের তৈরি বাড়ি, রাস্তা, ড্রেন, কুয়ো ইত্যাদির অস্তিত্বও পাওয়া যায়। এছাড়া আরও দুটো প্রস্তরলেখা পাওয়া যায় - একটা আরবি ভাষার সমাধি ফলক, এটি খ্রিস্টাব্দ ১৩০২ সালের অন্যটা ফরাসি ভাষায় লিখিত মসজিদ নির্মাণের অনুমতিপত্র। এই অনুমতিপত্র প্রদান করেছিলেন দিল্লি সম্রাট ফারুকশিয়ার ১৭১৮ সালের। ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খ্রিস্টাব্দ পাঁচ শতকে তৈরি পাথরের বুদ্ধ এবং লোকেশ্বর মূর্তি। লোকেশ্বর হল বিষ্ণু এবং বুদ্ধের মিলিত রূপ। বারো শতকে তৈরি পোড়ামাটির সূর্যমূর্তিটিও বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এগুলো প্রদর্শিত হয় পার্শ্ববর্তী মিউজিয়ামে। জাহাজঘাটা বা দুর্গের বর্তমান বাঁধানো সিঁড়ির কাছাকাছি রয়েছে স্থানীয় মিউজিয়াম। মিউজিয়ামের পাশের রাস্তা পার হলেই উল্টোদিকে রয়েছে গোবিন্দ ভিটা। এখানে খ্রিঃ পূঃ তৃতীয় শতক থেকে খ্রিষ্টাব্দ পঞ্চদশ শতক পর্যন্ত সময়ে নির্মিত কিছু প্রত্নবস্তু এবং মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এখান থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে তোতারাম পন্ডিতের ধাপ খুঁড়ে পাওয়া গেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ মন্দিরের অস্তিত্ব। তিন কি.মি দূরের গোকুল গ্রামের গোকুল মেধ ধাপ বা ঢিবি খনন করে পাওয়া গেছে ১৭২ টি বন্ধ কুঠূরিওয়ালা একটি মঞ্চ। অনুমান করা হয়, এটি খ্রিস্টাব্দ  ষষ্ঠ শতকে তৈরি। বন্ধ কুঠুরিগুলোর কারণে স্থানীয় লোকেদের কাছে এটা পরিচিত হয় লক্ষ্মীন্দর - বেহুলার বাসর ঘর নামে। জাহাজঘাটা বা দুর্গ অঞ্চলের দেড় কি.মি. দূরের বসুবিহার গ্রামের নরপতির ধাপ খনন করে পাওয়া যায় বৌদ্ধ মন্দিরের ধ্বংসপ্রাপ্ত অবশেষ। ব্রিটিশ ভারতের পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে এই মন্দির দুটোই হিউ এন সাং - এর বিবরণীতে লিপিবদ্ধ পুন্ড্রনগরের বৌদ্ধ মন্দির। জাহাজঘাটা বা দুর্গ অঞ্চলের থেকে সাড়ে 3 কি.মি. দূরত্বের গ্রাম বাঘোপাড়ায় থাকা স্কন্ধের ধাপ খুঁড়ে পাওয়া গেছে একটি বেলে পাথরের তৈরি কার্তিক মূর্তি এবং স্কন্ধ মন্দির বা কার্তিক মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কলহন লিখিত রাজতরঙ্গিনীতেও এই মন্দিরের উল্লেখ ছিল। এটাই ছিল পুন্ড্রনগরের কাছাকাছি থাকা স্কন্ধনগর গ্রাম। এই বাঘোপাড়া গ্রামেরই আরেকটি ধাপের নাম হল 'খুলনার ধাপ'। এই ধাপ খুঁড়েও একটা মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। এই ধাপের নাম কেন ধনপতি সদাগরের এর স্ত্রীর নামে করা হয়েছে সেটা জানা যায় না। এখন পর্যন্ত যতটা খননকার্য হয়েছে তা থেকে পুরাতাত্ত্বিকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ই প্রাচীন পুন্ড্রনগর। পাঁচিল ঘেরা দুর্গ অঞ্চল বা বর্তমান নামের জাহাজঘাটা বাইরেও বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিল এই পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের রাজধানী সমৃদ্ধশালী পুণ্ড্রনগর। হিউ এন সাং এখানে এসেছিলেন এবং তাঁর বিবরণীতে চৈনিক ভাষায় এই স্থানের উল্লেখ করেছেন 'পান-না-ফা-আনকা' নামে। মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল রাজাদের আমলে এটা ছিল একটা অঞ্চলের রাজধানী। পাল যুগের অবসানের পর এটা হয়ে যায় কোন হিন্দু সামন্ত রাজার রাজধানী। উপকথা অনুসারে শেষ রাজা পরশুরাম। তিনি মুসলিম ধর্মপ্রচারক তথা যোদ্ধা শাহ্‌ সুলতান বলখির হাতে পরাজিত ও নিহত হন সম্ভবত খ্রিঃ ১১ শতকে। এই অঞ্চলে তাঁর নামে একটি মাজারও রয়েছে। বর্তমানে জাহাজঘাটা ব পাঁচ মিটার উঁচু দুর্গ অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য বানানো হয়েছে প্রশস্ত সিঁড়ি। তারপর পাঁচিল ধরে এগিয়ে যাওয়া। মেপে দেখলাম ভেঙে যাওয়া পাঁচিলের ইটের দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চি, প্রস্থ ৫ ইঞ্চি এবং উচ্চতা ২ ইঞ্চি। তবে সর্বত্রই একটা একটা অবহেলা এবং ঔদাসীন্য চোখে পড়ে। বেশির ভাগ অঞ্চলেঈ বাড়ি-ঘর-দোর এবং চাষের জমি। দুর্গ অঞ্চলের অভ্যন্তরেও লাউ, কুমড়ো এবং শাক-সবজির চাষ। মিউজিয়াম ছোটখাটো হল ছিমছাম। সব জায়গা ঘুরে দেখার জন্য কোন টিকিট লাগে না, শুধু মিউজিয়ামের জন্য একশ টাকা এবং গোপাল ভিটার জন্য পঞ্চাশ টাকা। সেটা অবশ্য আমরা ভারতীয় বলে, স্থানীয় বা বাংলাদেশীদের জন্য যথাক্রমে দশ ও পাঁচ টাকা। মিউজিয়ামে একটা পাথরের মূর্তি আছে বাঁদিকে কাত হয়ে শুয়ে থাকা মায়ের বুকের কাছে শায়িত শিশু, ক্যাপশান খ্রিস্টাব্দ এগারো শতক। অবিকল এই মূর্তি দেখেছি নিউইয়র্কের 'মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি'তে। সেখানে ক্যাপশান এগারো শতক বেঙ্গল। তার মানে সেই মূর্তি মহাস্থতগড় থেকেই নেওয়া। মিউজিয়ামের একজন গাইড জানালেন মহাস্থানগড় আর চন্দ্রকেতুগড় নাকি সমসাময়িক। শুনে লজ্জায় মাথা হেঁট। চন্দ্রকেতুগড়েড় অমূল্য প্রত্নভান্ডার তো আজ পর্যন্ত মাটির নিচেই রয়ে গেল বেশিরভাগ। সরকারি উদ্যোগে কোনো স্থানীয় মিউজিয়াম নেই চন্দ্রকেতুগড়ে। সেটা থাকা বাঞ্ছনীয় ছিল।  [:]
Dev Sahitya Kutir
Hello, how can we help you?
WhatsApp